রমজান ঘিরে নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা অত্যন্ত গর্হিত কাজ: প্রধানমন্ত্রী

0
109
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে খাদ্যে ভেজাল, মজুতদারি, কালোবাজারি এবং নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টাকে অত্যন্ত ‘গর্হিত কাজ’ উল্লেখ করে এসবের বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘খাদ্যে ভেজাল দেওয়া, মজুতদারি বা কালোবাজারি এবং নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি এটা যেন কেউ করতে না পারে সেজন্য সকলকে আমি সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর বাসসের

তিনি বলেন, ‘সামনে রমজান মাস। এ সময় আমাদের কিছু ব্যবসায়ী জিনিসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে। এটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কারণ রমজান মাস কৃচ্ছ্রতা সাধনের সময় এবং মানুষ যাতে ভালোভাবে তাদের ধর্মকর্ম এবং রোজা যথাযথভাবে পালন করতে পারে সেদিকেই সবার দৃষ্টি দেওয়া উচিত। সেসময় এসব মুনাফালোভীদের জিনিসের দাম বাড়ানো আর মানুষকে বিপদে ফেলার কোনো মানে হয় না।

শেখ হাসিনা বলেন,  ‘ইমামগণ যখন মসজিদে জুম্মার নামাজের খোৎবা দেন তখন কালোবাজারি বা মজুতদারি বা খাদ্যে ভেজাল দেওয়া আর অযথা মানুষকে কষ্ট দেওয়া যে গর্হিত কাজ সে ব্যাপারে মানুষকে আপনাদের আরো বলা উচিত। খোৎবাতেও এটা বলতে পারেন বা মানুষকে সচেতন করতে পারেন। সেভাবেই কাজ করতে আমি মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খাদেমগণকে অনুরোধ করবো। তাহলে মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত মুনাফা নেওয়ার প্রবণতা নিশ্চই কমবে।’

নিম্ন আয়ের মানুষের ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকার পারিবারিক কার্ডের ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অধিক দামে চাল ক্রয় করে ৩০ টাকা মূল্যে বিভিন্ন পরিবারকে দিচ্ছি। রমজানকে সামনে রেখে আরও ১ কোটি মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে আমরা চাল সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি এবং একেবারে কর্মক্ষমতাহীনদের বিনা পয়সায় ৩০ কেজি করে চালও দিয়ে যাচ্ছি। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য সরকার ন্যায্যমূল্যে এই নিত্যপয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে।’

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজ সরকার যাতে আরো ভালোভাবে এগিয়ে নিতে পারে সেজন্য সকলের কাছে দোয়া চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এদেশের একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। তাঁর সরকার গৃহহীন-ভূমিহীনকে বিনামূল্যে ঘরবাড়ি এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কৃষিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। শ্রমিকদের কল্যাণে নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন এবং ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করছে। বিদেশগামীদের জন্য প্রবাসিকল্যাণ ব্যাংকে বিনা জামানতে ব্যাংক ঋণেরও ব্যবস্থা করেছে।

কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে গিয়ে শেষে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরবে— এটা তাঁর সরকার চায় না বলেই সবধরনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তৃতীয় ধাপে এসব মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন। তিনি তিনটি ধাপে সারাদেশে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ৫৬৪টি মসজিদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেছেন।

সরকারপ্রধান প্রথম দফায় ২০২১ সালের ১০ জুন ৫০টি মসজিদ এবং চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আরো ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন। অবশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের জুন মাসে শেষ হবে।

এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসমূহে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ ওজু ও নামাজের আলাদা জায়গা রয়েছে। এছাড়া হজযাত্রীদের জন্যে রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফন পূর্ব আনুষ্ঠানিকতা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষা ব্যবস্থা, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ইসলামের দাওয়াতের জন্যে সম্মেলন কেন্দ্র, ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র, মসজিদসহ দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্যে থাকার সুবিধা রয়েছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসানও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানে বরিশালের আগৈলঝাড়া, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কমকর্তা, আলেম-ওলামা ও সাধারণ জনগণ ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর নির্মিত ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.