চলমান কর্মসূচি পালনে হার্ডলাইনে বিএনপি

কামরুল হাসান

0
121

সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের কর্মসূচি পালনে হার্ডলাইনে বিএনপি। আগামীতে সরকারের পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনের আগে মাঠে নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে দলটির হাইকমান্ড। লক্ষ্য অর্জনে এরই মধ্যে কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ দেশের বিভিন্ন মহানগর ও জেলা পর্যায়ের শতাধিক থানা ও উপজেলা কমিটিকে শোকজ করেছে দলটি। ভবিষ্যতে যেসব ইউনিট ও অঙ্গসংগঠন কিংবা নেতারা কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ ও গরহাজির থাকবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে সবার ক্ষেত্রে একই নিয়ম বাস্তবায়ন হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, বিগত দুটি নির্বাচনের আগে আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়া বিএনপি এবার কর্মসূচি পালনে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শোকজ করা কমিটিগুলোতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিজেদের ব্যাখ্যা চেয়েছে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর। একইভাবে যেসব থানা ও উপজেলা কমিটি দায়সারা কর্মসূচি পালন করেছে বলে দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে তাদেরও সতর্ক করা হয়েছে। মৌখিকভাবে এ সতর্কতা উচ্চারণ করা হয়েছে। আগামীতে সর্বাত্মকভাবে মাঠের কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হলে কমিটি ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বেশ কয়েকটি থানা কমিটিকে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই কথা বলতে রাজি হননি। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, কয়েকটি কমিটির কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে, কোনো শোকজ করা হয়নি।

বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদ ও সরকারের পদত্যাগসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে এবং দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে রমজান মাসেও ১০ দিনের কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এর মধ্যে ১ এপ্রিল থেকে সারাদেশের সাংগঠনিক সব মহানগর ও থানা, জেলা ও উপজেলা এবং ইউনিয়নে ৯ দিনব্যাপী অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে দলটি। গত ৬ এপ্রিল সারাদেশের মহানগরীর সব থানা এবং সব উপজেলায় দুই ঘণ্টা যুগপৎ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ১০ থেকে ১৬ এপ্রিল দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রচারপত্র বিতরণ, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নেতাকর্মী। প্রচার-প্রচারণায় দশ দফা সংবলিত ‘বুকলেট’ ছাড়াও সরকারের দুর্নীতি-অনিয়ম তুলে ধরা হয়। তৃণমূলের এসব কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে টিমও গঠন করা হয়। কর্মসূচি সমন্বয়ের জন্য বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এক দফা আন্দোলনে যাওয়ার আগে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রমাণে এবং নেতাকর্মীর মনোবল ধরে রাখতে একযোগে এসব কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিলেও অনেক জায়গায় কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ দলের সংশ্লিষ্ট কমিটি। বিশেষ করে থানা এবং উপজেলা পর্যায়ের দুই ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে আশাহত দলের হাইকমান্ড। ওইদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ ১৩টি মহানগরীর ১২৮টি থানায় এবং সাড়ে ৫০০ উপজেলা মিলে প্রায় সাড়ে ৬০০ স্থানে একযোগে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন হওয়ার কথা। তবে শতাধিক থানা ও উপজেলায় গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় ওইসব কর্মসূচি পালনে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, দলের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অংশ নিতে বলা হয়েছিল। পৌর ইউনিটের নেতাকর্মীকে উপজেলার কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় নেতারা রোজা, খামখেয়ালি ছাড়াও সরকারি দল ও প্রশাসনের বাধার অজুহাতে কর্মসূচি পালন করেননি বলে দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান।

বিএনপির ওই নেতা আরও জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণেরও প্রায় আটটি থানা ওই কর্মসূচি পালন করেনি। এসব বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম যাচাই-বাছাই করে দলের হাইকমান্ডকে অবহিত করে। ওই প্রতিবেদনের আলোকে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এ নিয়ে আলোচনা করেন নেতারা। এতে আগামীতে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়ে এখনই তৃণমূলে কঠোর বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেসব সাংগঠনিক কমিটি কর্মসূচি পালনে অবহেলা প্রদর্শন করবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.