চট্টগ্রামের ছেলেমেয়েরা অনুপ্রাণিত করল সেই রকম!

0
21
‘প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি-প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসবে শিক্ষার্থীর সঙ্গে ছবি তোলেন অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব, অভিনেত্রী সাবিলা নূর, মেহজাবীন চৌধুরী ও উপস্থাপিকা মৌসুমী মৌ। গত সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কে

এ রকম যে হবে, আমি ধারণা করে রেখেছিলাম। তা–ই হলো। শিক্ষার্থীরা এসে বলতে লাগল, আপনার সঙ্গে আগেও দেখা হয়েছে। আগেরবার ছবি তুলেছিলাম। দেখুন, এই যে সেই ছবি। আমার এই বন্ধুটাও সেদিন আমার পাশে ছিল। আজকে দুই বছর পর, একই রকম করে আরেকটা ছবি তুলি।

চট্টগ্রামে কৃতী শিক্ষার্থী উৎসবে গেছি। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব। উচ্চমাধ্যমিক জিপিএ–৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা। অনুষ্ঠান হচ্ছে ফয়’স লেকে। ১০ নভেম্বর ২০২৫ হেমন্তের মিষ্টি সকালে পাহাড়, গাছপালা, আর সরোবরের সৌন্দর্যে ভরা একটা সুন্দর পরিসরে। আর আছে নানা ধরনের রাইড।

কী ধারণা করেছিলাম? আমরা প্রথম আলোর পক্ষ থেকে মাধ্যমিকে জিপিএ–৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়ে থাকি। দুই বছর আগে যারা সেই সংবর্ধনা পেয়েছে, তাদের অনেকেই আবারও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিও–৫ পেয়েছে। কাজেই ওদের সঙ্গে এবারের দেখাটা হবে অন্তত দ্বিতীয়বারের মতো।

আর কিশোর আলোর অনুষ্ঠান আমরা নিয়মিত করেছি বেশ কয়েকবার, চট্টগ্রামে। অনেক শিশু–কিশোর সেসব অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। তাদের অনেকেই এবার বড় হয়ে উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ–৫ পাবে, এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই ওদের সঙ্গেও দেখা হবে।

চট্টগ্রামে কৃতী শিক্ষার্থী উৎসবে বক্তব্য দিচ্ছেন আনিসুল হক। পাশে মুনির হাসান
চট্টগ্রামে কৃতী শিক্ষার্থী উৎসবে বক্তব্য দিচ্ছেন আনিসুল হক। পাশে মুনির হাসান

৯ নভেম্বর রাতেই আমরা হাজির হয়েছিলাম চট্টগ্রাম। একই ফ্লাইটে আমাদের সঙ্গে গেলেন  কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) অনুপ কুমার সরকার। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক আনোয়ারুল কবির, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক যাহেদুর রহমান ও বিবিএ বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ জুলফিকার আলীর উপস্থিতি আমাদের উৎসাহিত করল। সকাল ৯টা থেকে শিক্ষার্থীরা আসছে। আমি ১০টার দিকে ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কে হাঁটতে শুরু করলাম। আমার সঙ্গে প্রথম আলো ডিজিটাল বিজনেসের হেড জাবেদ সুলতান পিয়াস। আর জাহিদ হোসাইন খান, প্রথম আলোর প্রযুক্তি লেখক।

প্রথম আলো বন্ধুসভার স্টল, কিশোর আলো বিজ্ঞানচিন্তার স্টল, প্রেসিডেন্স ইউনিভার্সিটির স্টল, বিভিন্ন রাইড—সব কিছুর সামনে কৃতীদের ভিড়। ওদের চোখের তারায় প্রতিভার ঝিলিক, মুখচ্ছবিতে ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়, চলার ভঙ্গিতে বাংলাদেশকে গড়ার দৃঢ়তা। আমি একেবারেই মোহিত।

ছেলেমেয়েদের চোখমুখের অভিব্যক্তি খেয়াল করেছেন? জাবেদ সুলতান, প্রথম আলোর হেড অব ইভেন্টস ও তারুণ্যবিষয়ক সম্পাদক মুনির হাসান, প্রথম আলোর উপসম্পাদক কবি বিশ্বজিৎ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন—সবার চোখেই ব্যাপারটা বিশেষভাবে ধরা পড়েছে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চোখেমুখে মেধার ঝলকানি, কৃতিত্বের প্রেরণাদায়ী আলো। মাদ্রাসা থেকে আসুক, ইংরেজি মাধ্যম থেকে বা সিটি কলেজ বা সরকারি কলেজ—সব কটি ছেলেমেয়ে ভীষণ স্মার্ট। এই স্মার্ট শব্দের অর্থ বুদ্ধিমান এবং এই কিশোর-তরুণেরা সাংঘাতিক রকম সুশৃঙ্খল। দুপুর হতে না হতেই তারা এসে মঞ্চের সামনের আসনে বসে পড়ল।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের একাংশ। গত সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কে
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের একাংশ। গত সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের ফয়’স লেক অ্যামিউজমেন্ট পার্কে

মুনির হাসান কথা বলতে শুরু করলেন। তারা মন দিয়ে বিভিন্ন বক্তার কথা শুনল। বোঝাই যাচ্ছে, তারা শুধু তারকাদের দেখতে আসেনি, বা শিরোনামহীন আর তীরন্দাজের আকর্ষণেই আসেনি, তারা ভর্তি বিষয়ে তথ্য, বিষয় বাছাই, ক্যারিয়ার গড়া—সব বিষয়েই নিজেদের আরেকটু ঋদ্ধ করার সুযোগ নিতেও এসেছে। এআই কতটুকু ব্যবহার করব, ফেসবুকে কী প্রকাশ করব, সেসব নিয়ে মঞ্চের কথা তারা শুধু মন দিয়ে শুনছে না, ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা হিসেবে স্মৃতিতে স্থায়ী করে রাখছে। অধ্যাপক জে আলী শোনালেন মহাভারতের একলব্য আর দ্রণাচার্যের গল্প। তাতেও তারা শুধু কান পেতে রইল না, মন পেতেও রইল।

বাবর আলী ডাক্তার কিন্তু হেঁটে বেড়ান সারা বাংলাদেশে, ওঠেন পাহাড়ে, তার গল্পটা তো আকর্ষণীয় হবেই। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেছে দুজন, তাদেরও মঞ্চে আনলেন মুনির হাসান। মঞ্চে এলো প্রিয়াংশ, যার মুখস্থ ১২০ দেশের জাতীয় সংগীত, সুরে সুরে সে গাইতে পারে। সে জানাল, তার প্রেরণা প্রথম আলো, প্রথম আলোয় তার খবর আর ছবি ছাপা হয়েছিল। মঞ্চে মৌসুমী মৌ ডেকে আনলেন তাওসিফ, মেহজাবীন, সাবিলা নূরকে। তাঁরা গাইলেন, নাচলেন, আর জীবন—গড়ার টিপস দিলেন। তীরন্দাজের  সঙ্গে সবাই মিলে গান ধরল—‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’। আর শিরোনামহীনের সঙ্গে ছেলেমেয়েরা গাইল—‘প্রতিটি জানালায় প্রতিটি দরজায় হাসিমুখ হাসিমুখে আনন্দধারা…’

‘তুমি চেয়ে আছ তাই আমি পথে হেঁটে যাই’—সত্যি এই ছেলেমেয়েরা চেয়ে আছে, তাই আমরা পথ হাঁটি, আবার বাংলাদেশ চেয়ে আছে বলে এই ছেলেমেয়েরা পথ হেঁটে যায়, এরা বহু দূর যাবে, বহু দূর। এদের হাসিমুখ একদিন বাংলাদেশের মুখেও হাসি ফোটাবে। চট্টগ্রামের ছেলেমেয়েরা আমাদের সেই রকমভাবে প্রেরণা দিল, অনুপ্রাণিত করল—সেই রকম!

ফেরার সময় আমার কানে বাজছে এক শিক্ষার্থীর মায়ের কথা—আপনাদের ধন্যবাদ, এই রকম একটা গোছানো সুন্দর আর মোটিভেশনাল অনুষ্ঠান করার জন্য।

আপনাদেরই ধন্যবাদ, বাংলাদেশের মায়েরা, যাঁরা ছেলেমেয়েদের সঠিক পথ দেখাচ্ছেন আর বাংলাদেশকেই গড়ে তুলছেন।

আনিসুল হক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.