ঘোষণা ছাড়াই সয়াবিন তেলের দাম ৪ টাকা বেড়েছে। দু’দিন ধরে ঢাকার বাজারে বোতলজাত সয়াবিন ১৭৩ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ কাঁচামরিচের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশি পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। তবে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় শীতের সবজি কিনে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা।
আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমলেও ডলার সংকটে খরচ বেড়ে গেছে। ৪ টাকা বাড়ানোর পরও লিটারে ১৩ থেকে ১৪ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানো হয়। এর পর থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৯, পাঁচ লিটার ৮২৫ এবং খোলা পামঅয়েল ১২৪ টাকা দরে বিক্রি হয়ে আসছে। তবে বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার বাজারে খুচরা পর্যায়ে এক লিটারের বোতল সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৭৩ টাকায়। দুই লিটারের বোতল ৩৪৬, ৩ লিটার ৫২০ ও ৫ লিটার ৮৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্যতেল, চিনিসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে, যা পরে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়। এবার সে প্রক্রিয়া দেখা যায়নি।
বেশ কয়েক মাস ধরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও দেশে কেন বাড়ছে– জানতে চাইলে টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। চার টাকা বাড়ানোর পরও লিটারে ১৩-১৪ টাকা লোকসান হচ্ছে। ডলারের দাম না কমলে ভবিষ্যতে আমদানি কমে যেতে পারে।’ বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের পরিচালক রেদোয়ানুর রহমান বলেন, ‘দেশে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বেড়েছে। সে জন্য দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে।’
চিনির বাজার এখনও অশান্ত। প্যাকেট চিনি নেই বললেই চলে। খোলা চিনির কেজি ১৪৫-১৫০ টাকা। প্রায় এক মাস ধরে চাল, আটা ও ময়দার বাজার বাড়তি। সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, এক মাসে আটার দাম ১০ শতাংশের বেশি এবং ময়দা প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে মাঝারি চালের দাম সাড়ে ৬, মোটা ৩ ও সরু চালের দাম প্রায় দেড় শতাংশ বেড়েছে।
এ বছর কাঁচামরিচের দাম রেকর্ড গড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা ছুঁয়েছিল। ধীর ধীরে কমে গত মঙ্গলবার কেজি ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা। গতকাল থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।
নতুন আলু বাজারে এলেও দামে তার প্রভাব পড়েনি। পুরোনো আলু ৫০-৫৫ এবং নতুন আলু ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে ছোট ব্যবসায়ীরা। দেশি পেঁয়াজ পাঁচ-ছয় দিন ধরে বাড়তি থাকলেও এক দিনের ব্যবধানে গতকাল খুচরা বাজারে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১৩০-১৪০ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। গত বছর এই সময়ে দুই ধরনের পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকার আশপাশে ছিল।
মুরগির বাজারে হেরফের হয়নি। মাসখানেক ধরে ১৭০-১৭৫ টাকায় কেনা যাচ্ছে ব্রয়লার; সোনালি মুরগির কেজি ২৯০-৩২০ টাকা। ডিমের ডজন বাদামি রঙের ১২০ ও সাদা ১১০ টাকা। গত বুধবার রাতে ব্যবসায়ীরা ঢাকায় গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও সব জায়গায় তা কার্যকর হতে দেখা যায়নি। ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এ জন্য মানকে অজুহাত বানাচ্ছে তারা।
শীতের প্রায় সব ধরনের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। দামও ক্রেতার নাগালে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে কেনা যাচ্ছে। বেশির ভাগ সবজি ৫০ টাকার আশেপাশের দরেই রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে মাছের বাজারও স্থিতিশীল।