সকাল থেকেই মিরপুরের রূপনগর চলন্তিকা এলাকায় বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতন মাঠে জড়ো করা হয়েছে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীদের। ত্রাণ পাবেন, মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবেন- এমন আশায় কয়েকশ’ নারী-পুরুষ-শিশু জড়ো হন সেখানে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর দুপুরের দিকে ত্রাণ হিসেবে তাদের হাতে নতুন পোশাক তুলে দেওয়া হয়। তবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা বলছিলেন, তাদের আগে মাথা গোঁজার ঠাঁই দরকার। সব পুড়ে যাওয়ায় তারা রান্নাও করতে পারছেন না। খাবার দরকার তাদের।
গতকাল সোমবার ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশকিছু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বেশিরভাগ পরিবারই ঠাঁই নিয়েছে রাস্তার আশপাশে। সবকিছু পুড়ে যাওয়ার পর কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুই বেলা তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
অবশ্য গতকাল দুপুরে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তির বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বস্তির ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, এই এলাকায় যতদিন সাহায্যের দরকার, ত্রাণের দরকার, তা করা হবে। সরকার আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করবে।
বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতন মাঠে ত্রাণ নিতে গিয়েছিলেন মাটিকাটা শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, শুক্রবার রাতের আগুনে তার বাসা ছাই হয়ে গেছে। পরিবারের লোকজন প্রাণ নিয়ে বের হলেও তারা রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। এরপর থেকে কখনও বিতরণ করা খাবার পাচ্ছেন, আবার কখনও না পেলে উপোস থাকতে হচ্ছে। তিনি সবকিছুর আগে বস্তিতে একটু মাথা গোঁজার জায়গা চান।
তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন পেশায় রিকশাচালক সবুর উদ্দিন। তিনি বলছিলেন, ‘কাপড় দিয়া গেল- আমগো তো ঘরই নাই, এই কাপড় দিয়া কী করুম।’ তিনি একটি বাসা বরাদ্দের পাশাপাশি কাজ না পাওয়া পর্যন্ত পানি ও খাবার চেয়ে বলেন, স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে আর পারছি না।
তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন সালাম আক্তার। তিনি জানান, শুক্রবারের আগুনের পর এক পোশাকে ঘর থেকে বের হন। এরপর এক পোশাকেই কারখানায় ডিউটি করছেন। সরকার তাদের থাকার জায়গা দিলে বেতনের টাকায় নতুন করে সংসার গোছাবেন।
আরেক পোশাক শ্রমিক মরিয়মের দুই মাস বয়সী সন্তান রয়েছে। এতদিন মায়ের কাছে বস্তির বাসায় সন্তান রেখে কাজে গেলেও তিনি এখন তা করতে পারছেন না। মরিয়ম বলছিলেন, ‘আগে তো বাসা ছিল। সেখানে মেয়েটাকে রেখে যেতাম। আগুনে বাসাটা ছাই হওয়ার পর এখন রাস্তায় থাকি।’
আবদুল হক নামের ওই বস্তির এক বাসিন্দা জানান, তিনি পরিবার নিয়ে একটি স্কুলে আশ্রয় পেলেও সেখানে আর কতদিন থাকতে পারবেন। এজন্য আশপাশে বাসা খুঁজলেও মাসের মাঝামাঝি হওয়ায় পাচ্ছেন না। সামনের মাসে বাসা পেলেও ভাড়া কয়েক গুণ বেশি। আগে তিনি পুড়ে যাওয়া বস্তির একটি ঘরে পুরো পরিবার নিয়ে তিন হাজার টাকায় ভাড়া থাকতেন জানিয়ে বলেন, বস্তি ছাড়া ওই ভাড়ায় তো বাসা মিলবে না।
গত শুক্রবার রাতে তিন ঘণ্টার আগুনে ঝিলপাড়ে গড়ে ওঠা পুরো বস্তিই পুড়ে যায়। এতে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।