
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসনের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছিল না। তারা আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের আক্রমণের প্রস্তুতিও বুঝতে পারেনি।
রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় এ আলোচনা এসেছে। সভায় গত বুধবার গোপালগঞ্জে সহিংসতা সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যর্থ হলো কেন, সে বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভাসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের কথা বলে জানা গেছে, আলোচনায় উঠে আসে, এনসিপির সমাবেশকে ঘিরে সহিংসতা ঘটাতে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও বাগেরহাট ও খুলনা থেকে আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের লোকজন এসেছিল। হামলাকারীদের ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সেটা আঁচ করতে পারেনি। পরিস্থিতি যে এমন মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাবে, সেটা পুলিশ অনুমান করতে পারেনি। এটি ছিল তাদের বড় ধরনের ব্যর্থতা।
সভা-সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে জেলা পুলিশকে গোয়েন্দা বার্তা বা পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল বলে সভায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির প্রতিনিধি জানান। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুলিশ সদর দপ্তর এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদন পায়নি। তখন ওই সংস্থাটির প্রতিনিধি জানান, গোয়েন্দা তথ্য গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারকে দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ওই গোয়েন্দা সংস্থার কোনো পূর্বাভাস বা প্রতিবেদন পাননি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে গোপালগঞ্জ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাদের প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরা হয়। এ সময় জানানো হয়, ওই দিন পুলিশ শটগান দিয়ে ১ হাজার ৮০০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। ৬৭টি গ্যাস গান (কাঁদানে গ্যাসের শেল) নিক্ষেপ করে। পুলিশের লক্ষ্য ছিল ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। যার জন্য প্রাণঘাতী কোনো বুলেট পুলিশ ব্যবহার করেনি।
# হামলাকারীদের ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। # বাগেরহাট ও খুলনা থেকেও লোকজন এসেছিল। # এত প্রস্তুতির কিছুই টের পায়নি স্থানীয় প্রশাসন।
আলোচনায় আসে, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে এনসিপির নেতাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। পরে সেনাবাহিনী তাঁদের সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়।
সভায় আরও বলা হয়, এনসিপির চলমান পদযাত্রা কর্মসূচিতে অন্যান্য জেলায় যেভাবে দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জমায়েত করতে পেরেছিলেন; গোপালগঞ্জে সেটা করতে পারেননি। যার কারণে আওয়ামী লীগের হামলা ও সহিংসতা ব্যাপক আকার নেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কোর কমিটির এই সভা হয়। এতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র) খোদা বক্স চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গণি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ডিএমপি কমিশনার, র্যাবের ডিজি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনীর গুলি করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যখন যে পরিস্থিতি, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়।
গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কত সময় লাগতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
সেখানে গণগ্রেপ্তার হচ্ছে এমন অভিযোগ আছে—এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গণগ্রেপ্তার হচ্ছে না। যারা অন্যায় করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নিরপরাধ কেউ যাতে গ্রেপ্তার না হয়, সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত
দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে—এ প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বললে তো আপনারা বিশ্বাস করবেন না। আপনারাই বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে কি না।’
এ সময় একজন সাংবাদিক জানতে চান, গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে আগামী নির্বাচন কীভাবে করবেন?
জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘গণতন্ত্রে এটাই সৌন্দর্য। আপনি আপনার মতামত প্রকাশ করছেন। আমি আমার মত প্রকাশ করছি। শুধু খেয়াল রাখতে হবে একে অপরের প্রতি অশালীন ভাষা ব্যবহার করছি কি না। কোনো মিথ্যা কথা বলছি কি না।’
এরপর আরেকজন সাংবাদিক জানতে চান, এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যাবে কি না। জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘কেন যাবে না? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত। সামনে আরও সময় তো রয়ে গেছে। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। নির্বাচন করতে কোনো অসুবিধা হবে না।’