গোপালগঞ্জে দিনভর দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষ, কারফিউ

0
13
গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের সময় সাঁজোয়া যানে সেনাসদস্যদের টহল। গোপালগঞ্জ, ১৬ জুলাই, ২০২৫ছবি: এএফপি
  • সেনা পাহারায় গোপালগঞ্জ ছাড়েন এনসিপির নেতারা।
  • ডিসির বাসভবন ও কারাগারে ভাঙচুর। পুলিশের ওপর হামলা, গাড়িতে আগুন, ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর।
  • প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ।
  • অপ্রীতিকর অবস্থার আশঙ্কা ছিল আগেই, সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে দিনভর দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন। হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে চারজন নিহত, অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

১ জুলাই থেকে সারা দেশে মাসব্যাপী জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ ঘোষণা করেছিল এনসিপি। এই কর্মসূচি ঘিরে সকাল নয়টার পর থেকে বিকেল পর্যন্ত চার দফায় হামলা চালান কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সদর উপজেলার কংশুরে পুলিশ সদস্য ও তাঁদের গাড়ি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশস্থল, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, জেলা কারাগার চত্বরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনাগুলো ঘটে। এ সময় বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।

এনসিপির সমাবেশ মঞ্চে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বুধবার গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে
এনসিপির সমাবেশ মঞ্চে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বুধবার গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে, ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে বেলা ২টা ৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌঁছান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে সমাবেশস্থলে মঞ্চ ভাঙচুর ও হামলা চালান আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে সমাবেশ শেষে বেলা পৌনে তিনটার দিকে ফেরার সময় হামলার শিকার হন এনসিপির নেতারা। হামলার মুখে তাঁরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরে একপর্যায়ে এনসিপির নেতারা গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থান নেন। তখন এনসিপির নেতারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা জোরপূর্বক বিভিন্ন মসজিদে ঢুকে মাইকিং করে হামলার উসকানি দেন। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হামলা মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তোলেন।

গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পদ্মা সেতু এলাকায় ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা। বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে
গোপালগঞ্জে এনসিপির নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পদ্মা সেতু এলাকায় ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা। বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে

এদিকে গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে শাহবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতা–কর্মীরা। ঢাকার বাইরে অন্তত ২০ জায়গায় সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের খবর পাওয়া যায়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এনসিপির ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানায় এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করে।

সমাবেশ শেষে এনসিপির নেতারা পুলিশি পাহারায় গাড়িবহর নিয়ে ফেরার পথে তাঁদের ওপর হামলা শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে একপর্যায়ে গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালান। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আশপাশের জেলা থেকেও পুলিশ সদস্যদের গোপালগঞ্জে আনা হয়। মোতায়েন করা হয় চার প্লাটুন বিজিবি।

সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে এনসিপির নেতারা গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশের কার্যালয় ছাড়েন। বাঁ থেকে এনসিপির নেতা সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আখতার হোসেন
সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে এনসিপির নেতারা গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশের কার্যালয় ছাড়েন। বাঁ থেকে এনসিপির নেতা সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আখতার হোসেন, ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

বিকেল পাঁচটার দিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সহায়তায় গোপালগঞ্জ ত্যাগ করেন এনসিপির নেতারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এনসিপির নেতা আখতার হোসেন, হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম সেনাবাহিনীর একটি সাঁজোয়া যানের (এপিসি) মধ্যে প্রবেশ করছেন। প্রথম আলোর খুলনা প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জ থেকে গাড়িবহর নিয়ে সন্ধ্যা সাতটার দিকে খুলনা শহরে পৌঁছান এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা খুলনা সার্কিট হাউস ও একটি হোটেলে উঠেছেন।

খুলনায় রাত সাড়ে ৯টায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাসীরা জঙ্গি কায়দায় হামলা করেছে। এই হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে এনসিপি।

এ হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের শাস্তি হবে। অপরাধীদের অবশ্যই দ্রুত শনাক্ত করে পূর্ণ জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।’ এই বিবৃতির পর গতকাল রাত আটটা থেকে আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জ জেলায় কারফিউ জারির ঘোষণা দেওয়া হয়।

রাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে গোপালগঞ্জে আরও প্রায় দেড় হাজার পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানায় পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র। সূত্রটি বলছে, হামলার পর বিভিন্ন স্থানে সড়কে গাছ কেটে ফেলে রাখাসহ যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। এ কারণে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যের বড় অংশ গোপালগঞ্জে ঢুকতে পারেনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

গোপালগঞ্জে দিনভর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সময় চার ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮), টুঙ্গিপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১) ও সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন (২৪)।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে হামলা–সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮), টুঙ্গীপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১) ও সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন (২৪)।

গতকাল বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জীবিতেষ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, বিকেলে তিনজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁরা গুলিবিদ্ধ ছিলেন।

শুরুতে পুলিশের ওপর হামলা

জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা দক্ষিণাঞ্চলে ছয়টি জেলা সফর করেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে ভোলা এবং রাতে বরিশালে পদযাত্রা ও পথসভার মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের কর্মসূচি শেষ হয়। এরপর গতকাল গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের উদ্দেশে যাত্রার কর্মসূচি ছিল তাঁদের। শুরুতেই মাদারীপুর হয়ে গোপালগঞ্জ যাওয়ার কথা ছিল। এ জন্য সড়কেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে নিরাপত্তা কিছুটা জোরদার করা হয়েছিল।

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়িতে হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সদর উপজেলার উলপুর-দুর্গাপুর সড়কের খাটিগড় চরপাড়া এলাকায়
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়িতে হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সদর উপজেলার উলপুর-দুর্গাপুর সড়কের খাটিগড় চরপাড়া এলাকায়

এরই মধ্যে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর-দুর্গাপুর সড়কের খাটিয়াগড় চরপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলা হয়। কিছুক্ষণ পর হামলাকারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন দেন। সেখানে পুলিশের তিন সদস্য আহত হন। তাঁরা হলেন সদর উপজেলার গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (আইসি) আহমেদ বিশ্বাস, কনস্টেবল কাওছার ও মিনহাজ।

পুলিশের ওপর হামলার খবর শুনে ঘটনাস্থলে যান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রাকিবুল হাসান। ফেরার পথে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কের কংশুরে তাঁর গাড়ি হামলার মুখে পড়ে। হামলায় গাড়িচালক মোহাম্মদ হামিম আহত হয়েছেন বলে জানান ইউএনও।

দফায় দফায় হামলা-বিস্ফোরণ

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার কংশুরে ইউএনওর ওপর যখন হামলা হয়, তখন কয়েক কিলোমিটার দূরে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে চলছিল সমাবেশের প্রস্তুতি। বেলা পৌনে দুইটার দিকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই-তিন শ নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে সমাবেশস্থলে হামলা চালান।

হামলার সময় মঞ্চের আশপাশে থাকা পুলিশ সদস্যরা দ্রুত পার্শ্ববর্তী আদালত চত্বরে ঢুকে পড়েন। সমাবেশস্থলে থাকা এনসিপির নেতা-কর্মীরাও দৌড়ে সরে যান। তখন হামলাকারীরা মঞ্চের চেয়ার ভাঙচুর ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে আসেন এবং এনসিপির নেতা-কর্মীরা এক হয়ে পুলিশসহ ধাওয়া দিলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।

বেলা ২টা ৫ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌঁছান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে শহরের পৌর পার্ক ছাড়তে শুরু করলে আবার হামলার ঘটনা ঘটে।

গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ শেষে এনসিপির নেতা–কর্মীদের ঘিরে ফেলে হামলা চালান একদল ব্যক্তি
গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ শেষে এনসিপির নেতা–কর্মীদের ঘিরে ফেলে হামলা চালান একদল ব্যক্তি

ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এনসিপির সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে একদল ব্যক্তি লাঠিসোঁটা নিয়ে নেতা-কর্মীদের ঘিরে হামলা চালান। তাঁরা চারদিক থেকে এনসিপির নেতা-কর্মী ও পুলিশের গাড়ি আটকে দেন। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেন। জেলা কারাগার চত্বরে কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। হামলা হয় জেলা প্রশাসকের বাসভবনেও। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এনসিপির নেতা-কর্মীরা অন্যদিক দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন

পরে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এই হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তাঁদের বলা হয়েছিল, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু তাঁরা সমাবেশস্থলে এসে দেখেন পরিস্থিতি ঠিক নেই।

এ ঘটনায় সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, তা আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নানা হুমকি ও উসকানি দিয়ে আসছিলেন। এমনকি আশপাশের জেলাগুলো থেকে গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গোপালগঞ্জে জড়ো হচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।

কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলা বা সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথেষ্ট প্রস্তুতি ছিল না বলে এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করেন। তাঁরা মনে করেন, এ ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের কাছে আগাম গোয়েন্দা তথ্য থাকার কথা। সেটা ছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

হামলার ঘটনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পৃথক পৃথক যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতেও এ ঘটনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার সমালোচনা করা হয়। সরকারের ব্যর্থতার জন্য গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে স্বৈরাচারের দোসররা এমন ঘটনা ঘটানোর সাহস দেখিয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.