সংবাদ সম্মেলনে র্যাব–৪–এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক জানান, যৌতুকের দাবিতে ২০০৫ সালের ৭ জুন সামিনাকে শারীরিক নির্যাতনের পর গায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সামিনার স্বামী জাফর, জাফরের ভগ্নিপতি আবদুর রহিম, বোন রোকেয়াসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০১৮ সালে এই তিনজনসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় জাফর কারাগারে থাকলেও রহিম ও তাঁর স্ত্রী রোকেয়া পলাতক ছিলেন। তাঁরা দুজন ঘটনার পর গ্রেপ্তার হলেও ২০০৬ সালের শেষের দিকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে ছিলেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, আবদুর রহিম বারবার পেশা পরিবর্তন করে আত্মগোপন করেন। তালা-চাবি প্রস্তুতকারী, বাবুর্চির সহকারী, শরবত বিক্রেতা, বিভিন্ন মাজারের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বিভিন্ন সময় কাজ করতেন তিনি। কখনোই তিনি এক জায়গায় অবস্থান করতেন না। কিছুদিন পরপর বাসস্থান পরিবর্তন করতেন। তাঁর স্ত্রী রোকেয়া একজন পোশাককর্মী। তিনিও একটি পোশাক কারখানায় বেশি দিন চাকরি করতেন না। ২০১৭ সালে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখ পরিবর্তন করেন। নিজেকে অবিবাহিত দেখিয়ে পিতার নাম পরিবর্তন করে নতুন পরিচয়পত্র তৈরি করেন। ওই বছরই তিনি সৌদি আরবে পাড়ি জমান। গত জুনে তিনি দেশে ফিরে স্বামী আবদুর রহমানকে নিয়ে চাঁদপুরের নারায়ণপুর গ্রামে অবস্থান করছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০০৩ সালে পারিবারিকভাবে সামিনার সঙ্গে রোকেয়ার ছোট ভাই জাফরের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় কনেপক্ষ সাধ্য অনুযায়ী নগদ টাকা, আসবাস ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী দেয়। কিন্তু বিয়ের পর যৌতুকের টাকার জন্য সামিনাকে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন জাফর। তাঁর দাবি করা পুরো টাকা দিতে না পারায় সামিনার ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, যৌতুকের টাকা আদায় করতে রোকেয়া ও তাঁর স্বামী আবদুর রহিম ধামরাইয়ের বাসায় জাফর ও তাঁর স্ত্রী সামিনাকে দাওয়াত করে নিয়ে আসেন। একপর্যায়ে তাঁরা সামিনার কাছে যৌতুকের টাকা দাবি করেন। বাবা দরিদ্র হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে যৌতুকের টাকা দেওয়া সম্ভব না বলে জানিয়ে দেন সামিনা। এ সময় আবদুর রহিম, রোকেয়া ও অন্য আসামিরা সামিনার শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেন।
সামিনার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার তিন দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সামিনা মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি জাফরের বড় ভাই সালেক ও মামা ফেলানিয়া পলাতক।