অনলাইনে বিজ্ঞাপন বাবদ বাংলাদেশের তিনটি বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি গত পাঁচ বছরে আট হাজার ৭শ কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে। বাংলাদেশ থেকে এই অর্থ পেয়েছে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইমো, হেয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রতিবেদন দিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চকে এই তথ্য জানিয়েছে। বিটিআরসির পক্ষে এই প্রতিবেদন জমা দেন সিস্টেমস এবং সার্ভিসেস বিভাগের উপপরিচালক প্রকৌশলী নাহিদুল হাসান।
বিটিআরসির আইনজীবী এ কে এম আলমগীর পারভেজ বলেন, অনলাইন বিজ্ঞাপন বাবদ গত পাঁচ বছরে গ্রামীণ ফোন, বাংলালিক ও রবি সর্বমোট ৮ হাজার ৭শ ৪৪ কোটি ১৯ লাখ ৫ হাজার ৭৩ টাকা খরচ করেছে। বিজ্ঞাপন প্রচার বাবদ ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, ইমো, হোয়াটস অ্যাপস এই অর্থ আদায় করেছে। কীভাবে কোন ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ দেওয়া হয়েছে তা সবিস্তারে আদালতকে জানানো হয়েছে।
হাইকোর্টে দেওয়া বিটিআরসির প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচার বাবদ গ্রামীণ ফোন খরচ করেছে ৪৩ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার ৬২৯ ডলার। এরপর রবি খরচ করেছে ৩২ কোটি ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ডলার এবং বাংলালিংক খরচ করেছে ২৮ কোটি ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার ৯৬৭ ডলার। অর্থাৎ এই তিন প্রতিষ্ঠান ব্যয় করেছে ১০৪ কোটি ৯ লাখ ডলারের বেশি।
হাইকোর্টের নির্দেশনার পর বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে তিনটি ফোন কোম্পানিকে চিঠি লেখে। ৭ আগস্টের মধ্যে এই তথ্য দিতে বলা হয়।
এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ফোন কোম্পানিগুলো বিটিআরসিকে অনলাইন বিজ্ঞাপন বাবদ খরচের হিসাব জমা দেন।
হাইকোর্টে জমা দেওয়া ফোন কোম্পানিগুলোর প্রতিবেদন বলছে, গুগল, হোয়াটসঅ্যাপ, ইয়াহু, আমাজন, ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে তাঁরা বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছে।
রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ এনে বিদেশি প্রতিষ্ঠান গুগল, আমাজান, ফেসবুক ও ইউটিউবের বিরুদ্ধে গত ৯ এপ্রিল রিট দায়ের করেন হাইকোর্টের ছয়জন আইনজীবী। রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গুগল, আমাজান, ফেসবুক ও ইউটিউবের বিজ্ঞাপন থেকে রাজস্ব আদায়ে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না-তার কারণ দর্শাতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট ।
একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই কমিটি অনলাইনে বিজ্ঞাপন খাতে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলো কত টাকা নিয়েছে এবং নিচ্ছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিটিআরসি আজ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, বিজ্ঞাপন প্রচারের বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটস অ্যাপ, ইমোসহ নানা সামাজিক গণমাধ্যম বাংলাদেশের তিনটি মোবাইল ফোন কোম্পানির কাছ থেকে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ নিয়ে গেছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ কোনো অফিস নেই।
বিটিআরসির আইনজীবী আলমগীর পারভেজ জানান, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিদেশি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে বিটিআরসি বলেছে, বাংলাদেশে অফিস প্রতিষ্ঠা করতে। এসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান ভারত, ইন্দোনেশিয়ায় নিজস্ব অফিস স্থাপন করেছে।
অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচার বাবদ গুগলের মতো বিদেশি প্রতিষ্ঠান কত টাকা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছে তার খণ্ডিত চিত্র পাওয়া গেছে বলে জানান রিটকারী আইনজীবী হুমায়ুন কবীর।
তিনি বলেন, গুগল, ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে কত টাকা নিয়ে গেছে তার খণ্ডিত চিত্র বিটিআরসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর বাইরে বাংলাদেশের বহু প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি গুগল, ইউটিউবে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে ডোমেইন, হোস্টিং বাবদ কোন কোন বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছে সেই হিসাব এখনো উঠে আসেনি। গুগলের মতো বিদেশি প্রতিষ্ঠান কয়েক হাজার কোটি টাকা আয় করলেও বাংলাদেশ সরকারকে একটি টাকাও রাজস্ব দিচ্ছে না। রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
রিটকারী এই আইনজীবী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আজ একজন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় বৃহস্পতিবার বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আজ হাইকোর্টে এক প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে, অনলাইনে বিজ্ঞাপন বাবদ বাংলাদেশ সরকার রাজস্ব হিসেবে গত ৫ বছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা।
ডিএজি তুষার কান্তি রায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী শামীম খালেদ আদালতের কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। আগামী শুনানির তারিখে প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন এলেই গুগল, ফেসবুকের মতো বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো কত টাকা আয় করছে তা পুরোপুরি জানা যাবে।
আগামী ৩০ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।