বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকায় তল্লাশি করছে পুলিশ। আজ বুধবার সকাল থেকে এ তল্লাশি শুরু করে ঢাকা জেলা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর পুলিশ। সমাবেশে যোগ দিতে আসা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মীর মুঠোফোন ঘেঁটে দেখার পর তাঁদের আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে গাবতলী ও আমিনবাজার এলাকায় একই ধরনের তল্লাশি চালানো হয়েছিল।
পুলিশ বলছে, এটা নিয়মিত তল্লাশির অংশ। তবে বাসের যাত্রী ও চালকেরা বলছেন, গত এক মাসেও আমিনবাজার ও গাবতলী এলাকায় এ ধরনের কোনো তল্লাশি দেখেননি তাঁরা। ধামরাই থেকে গুলিস্তানগামী একটি বাসের চালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত এক–দুই মাসে এ ধরনের তল্লাশি হয়নি। তিন ঘণ্টা ধরে বসে আছি। গ্যাস খরচ হচ্ছে, যাত্রীদের কষ্ট হচ্ছে।’
মানুষের ‘ভোটাধিকার’ আদায়ের লক্ষ্যে আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বিএনপি। রাজধানীর ১২টি জায়গা থেকে যুগপৎভাবে একই ঘোষণা দেবে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২–দলীয় জোট, এলডিপি, গণ অধিকার পরিষদ, গণফোরাম, এবি পার্টিসহ ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোট।
অপরদিকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
দুই দলের এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সাভারের আমিনবাজার এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। একই সঙ্গে যাত্রীদেরসহ পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশের এ তল্লাশি চলাকালে সড়কের ঢাকামুখী লেনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। তাঁরা অভিযোগ করে বলছেন, দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত তাদের আটকে থাকতে হচ্ছে। অনেকেই বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
আজ সকাল ১০টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাভারের বলিয়ারপুর থেকে আমিনবাজার ব্যাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ঢাকাগামী লেনে পরিবহনগুলো যানজটে আটকে রয়েছে। অপর লেন দিয়ে বিপরীত দিকে যাওয়া পরিবহনগুলোও চলছে ধীর গতিতে। বেশ কয়েকজন বিএনপির বিএনপির সমর্থককে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আমিনবাজার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় সাভার মডেল থানা ও আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা বাসের যাত্রী, সন্দেহভাজন পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদসহ তল্লাশি চালাচ্ছেন। ১০-১৫ মিনিট পরপর ৬-৭টি করে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকার পর বাস থেকে নেমে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেন মো. শফিকুল ইসলাম। নিজেকে বিএনপির সমর্থক পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো সভা–সমাবেশ করতে দেয় না কেউ। আজকে যাচ্ছি তাও পুলিশ আটকে দিল।’
আশুলিয়া থেকে রাজধানীতে ব্যক্তিগত কাজে আসছিলেন মো.হাসান মিয়া। যানজটের কারণে একই এলাকায় তিনিও বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে রওনা দেন। তিনি বলেন, ‘আন্দোলন করলে তাঁরা করুক। আমরা সাধারাণ মানুষ। আমাদের তো ভোগান্তিতে ফেলানোর কোন দরকার ছিল না।’
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমিন বাজার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে থেকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে বেশ কয়েজনকে ঢাকার দিকে নিয়ে যেতে দেখেন এই প্রতিবেদক।
জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এটি আমাদের নিয়মিত তল্লাশিরই অংশ। তবে সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে না পারে, সে জন্য তল্লাশিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।’
প্রিজন ভ্যানে কাদের নেওয়া হয়েছে—এমন প্রশ্নে পুলিশের এই কর্মকর্তা০ বলেন, তল্লাশিতে কাউকে আটক করা হয়নি। এরা অন্য কোনো ঘটনায় আটক বা গ্রেপ্তার হয়ে থাকতে পারেন।
রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল মারুফ বলেন, ‘দুপুর একটা থেকে পরীক্ষা। তল্লাশির কথা শুনে বাসা থেকে আগেই বের হয়েছি। পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেখিয়ে দেড় ঘণ্টার যানজট ঠেলে আমিনবাজার পর্যন্ত আসতে পেরেছি।’
ঢাকার মিরপুরের একটি বায়িং হাউসে চাকরি করেন বইলাপুরে বাসিন্দা নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘সাড়ে নয়টায় অফিস ছিল। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পায়ে হেঁটে অফিসের দিকে যাচ্ছি। আমি তো ভাই কাজে যাচ্ছি, কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছি না। তাহলে আমাকে কেন এই ভোগান্তি পোহাতে হবে?’
কালিয়াকৈর বিএনপির নেতা রিপন দেওয়ান বলেন, ‘সমাবেশের যোগদান আমার রাজনৈতিক অধিকার। পুলিশ আমার সেই রাজনৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। আমি পায়ে হেঁটেই সমাবেশের যোগ দিতে নয়াপল্টনে যাচ্ছি।’
সমাবেশের যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করা হচ্ছে—এ অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অনেককেই গাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’