গরম পানিতে ঝলসে দেওয়া হলো দুই কিশোরের শরীর, কাউন্সিলর কারাগারে

0
139
চকরিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সালাম

গ্রেপ্তার আবদুস সালাম চকরিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি। তিনি একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ভুক্তভোগী দুই কিশোর উপজেলার পূর্ব বড়ভেওলা ইউনিয়নের বাসিন্দা। বর্তমানে তারা চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

চকরিয়া থানার পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার সকালে উপজেলার রামপুর চিংড়িজোনের ৪ নম্বর হোল্ডারে অবস্থিত আবদুস সালামের মাছের ঘেরে দুই কিশোরের শরীর গরম পানি ছুড়ে ঝলসে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে কাউন্সিলর আবদুস সালাম, তাঁর ঘেরের শ্রমিক মোহাম্মদ ছাদেক ও নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা হয়। এরপর বেলা তিনটার দিকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন আবদুস সালাম। বিকেলে তাঁকে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহার সূত্রে ও রামপুরে মাছের ঘেরে কাজ করেন—এমন চারজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার চোঁয়ারফাঁড়ি ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত দুটি নৌকায় মাছ ধরার শ্রমিক নিয়ে গত শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে আবদুস সালামের মাছের ঘেরে আসে ওই দুই কিশোর। কাজ শেষে শ্রমিকদের আবারও নৌকায় করে চোঁয়ারফাঁড়ি ঘাটে ফেরার কথা ছিল শ্রমিকদের। এ জন্য মাছের ঘেরের পাশে নৌকা নোঙর করে ঘুমিয়ে পড়ে ওই দুই কিশোর।

শ্রমিকেরা বলেন, নিজের শার্টের পকেট থেকে ১৮ হাজার ৬০০ টাকা চুরি করেছে—এমন অজুহাত তুলে শনিবার সকাল ছয়টার দিকে কিশোরদের মাছের ঘেরের টংঘরে নিয়ে বেঁধে রাখেন কাউন্সিলর আবদুস সালাম। তাঁর নেতৃত্বে ঘেরের শ্রমিক মো. ছাদেক ও মো. নাছির উদ্দিন ওই কিশোরদের ব্যাপক মারধর করে টাকা চুরির স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিশোরেরা স্বীকার না করলে তাদের শরীরে গরম পানি ছুড়ে মারা হয়। এতে দুই কিশোরের শরীর ঝলসে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ও আত্মীয়স্বজন খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

গ্রেপ্তারের আগে গতকাল দুপুরে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম বলেছিলেন, ভয়ভীতি দেখানোর পর এক কিশোর টাকা চুরির কথা স্বীকার করেছে। এরপর তিনি মাছের ঘের থেকে চলে আসেন। তিনি শ্রমিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন কোনো মারধর না করা হয়। তিনি ঘের থেকে চলে আসার আধা ঘণ্টা পর শোনেন, কিশোর দুজনের শরীর গরম পানিতে ঝলসে গেছে।

ভুক্তভোগী এক কিশোরের দাদা ও মামলার বাদী (৬৪) বলেন, ওই দুই কিশোর টাকা চুরি করেনি। কিন্তু অপবাদ দিয়ে খুব নির্মমভাবে ফুটন্ত গরম পানি শরীরে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে দুই কিশোরের শরীর এমনভাবে ঝলসে গেছে, দেখলে যে কারও কান্না চলে আসবে।

চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার তফিকুল আলম  বলেন, গরম পানি ছুড়ে দুই কিশোরের শরীর ঝলসে দেওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যে কাউন্সিলর আবদুস সালামকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতেও পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.