গণমাধ্যমের সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: উপদেষ্টা সাখাওয়াত

0
17
আলোচনা সভায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত।

গণমাধ্যমের সহযোগিতা ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন।

বিজেসি-আরএফইডি আয়োজিত শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীতে ‘নির্বাচন কমিশন প্রণীত সাংবাদিকেদের জন্য নীতিমালা ২০২৫’ শীর্ষক এক পর্যালোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা সাখাওয়াত বলেন, নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহের জন্যে নির্বাচন কমিশন যে নীতিমালা করেছে তা নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের আপত্তি আমলে নিয়ে অবিলম্বে উভয় পক্ষকে আলোচনা করতে হবে। এমন কোনো নীতিমালা করা যাবে না, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়।

দীর্ঘদিন নির্বাচন কমিশনে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে চাইলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবশ্যই সাংবাদিকদের সহযোগিতা নিতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০০৮ সালের পর থেকে বহু ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাননি। অনেক তরুণ তো জানেই না, কীভাবে ভোট দিতে হয়। মেজরিটি ভোটারদের বাদ রেখে একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন দেশ পরিচালনা করেছেন, এর দায় শুধু আওয়ামী লীগের নয়, দেশের সব নাগরিকেরই রয়েছে।

নির্বাচন কমিশন প্রণীত সাংবাদিকদের নীতিমালা নিয়ে তিনি বলেন, কমিশনের দেওয়া পরিচয়পত্র থাকার পরও কেন একজন সাংবাদিককে ভোট ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে- বিষয়টি বোধগম্য নয়, এটি পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে। তবে, গোপন কক্ষে একই সাথে দু’জনের বেশি সাংবাদিক প্রবেশ করতে না দেওয়ার যে নিয়ম রয়েছে সেটি সঠিক।

উপদেষ্টা সাখাওয়াত বলেন, আমি মনে করি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ইসিকে সাংবাদিকদের সহযোগিতা নিতে হবে। তার মতে, সরকার যেমনভাবে নির্বাচন চায়, নির্বাচন কমিশনের অবস্থানও অনেকটা তেমনই। তাই কমিশনের উচিত হবে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করা। একইসঙ্গে সবাইকে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের পার্থক্য স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে।

বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (টিসিএ) সভাপতি ফারুক হোসেন তানভীর, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনাজ পারভীন এলিস, বিজেসির ট্রাস্টি নূর সাফা জুলহাস ও ট্রেজারার মানস ঘোষ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজেসির সদস্য সচিব ইলিয়াস হোসেন, বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. আল মামুন ও আরএফইডির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী। বিজেসির সদস্য সচিব ইলিয়াস হোসেনের সঞ্চালনায়, নির্বাহী অন্তরা বিশ্বাসের উপস্থাপনায় মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরএফইডির সভাপতি কাজী জেবেল।

সভাপতির বক্তব্যে বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক বলেন, এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক বিষয় যে ২০২৪ সালের নির্বাচনে সাংবাদিকদের যে নীতিমালাটি ছিল সেটিতে কোনো পরিবর্তন না এনেই আগামী নির্বাচনের জন্যে চূড়ান্ত করেছে ইসি। তাহলে এত রক্তের বিনিময়ে দেশে যে পরিবর্তন আসল, তা-কি নির্বাচন কমিশন আমলে নিতে চাইছে না? তিনি অবিলম্বে নীতিমালা নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনার উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।

মতবিনিময় সভায় নির্বাচনী খবর সংগ্রহের জন্যে বিজেসি ও আরএফইডি যৌথভাবে প্রস্তুতকৃত একটি নীতিমালা প্রস্তাব করেন আরএফইডির সভাপতি কাজী জেবেল। সেখানে তিনি, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন বলে প্রস্তাব দেন।

তিনি জানান, ভোটকেন্দ্রে কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন, কিন্তু কোনো ক্রমেই গোপন কক্ষের ছবি ভিতরের ছবি ধারণ করতে পারবেন না। তবে নির্বাচনী অনিয়মের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না বলে প্রস্তাব করেন।

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনাজ পারভীন এলিস বলেন, নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত নারীদের সংখ্যা অনেক। নীতিমালায় নারী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে আলাদাভাবে কিছু বলা হয়নি। অনেক সময় নির্বাচনী খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে নারীদের কিছু বিপত্তির মুখে পড়তে হয়। এ ধরণের ঘটনা ঘটলে যিনি ভুক্তভোগী তিনি কি করবেন আর যারা ঘটনা ঘটাচ্ছেন তাদের কি হবে সে বিষয়টি আমলে আনা দরকার।

টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (টিসিএ) সভাপতি ফারুক হোসেন তানভীর বলেন, অতীতে নির্বাচনী খবর সংগ্রহের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীরা যেভাবে সুযোগ পেয়েছেন সেভাবেই আগামী জাতীয় নির্বাচন কাভার করতে চাই।

বাংলাদেশ ফেডারের সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সংবাদ সংগ্রহের জন্যে যে নীতিমালা ইসি করেছে, তা সাংবাদিকদের স্বাধীনতার পরিপন্থি। ইসি পরিচয়পত্র দেওয়ার পরও কেন্দ্রে ঢুকতে একজন সাংবাদিকের প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি বাস্তবসম্মত নয়। কারণ, প্রিজাইডিং অফিসারের অনেক কাজ আছে। তার কাছে গিয়ে তার সময় নষ্ট করার মানে হয় না। তিনি চারটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন, এগুলো হচ্ছে- ভোটকেন্দ্রে ইসির দেওয়া পাশ দিয়েই প্রবেশ করতে পারবেন সাংবাদিকরা, গোপন কক্ষের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে পারবেন না, তবে কারচুপির ক্ষেত্রে পারবেন। গোপন কক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না। তবে অনিয়ম হলে পারবেন।

বাংলাদেশ ফেডারের সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, নির্বাচন কমিশন প্রণীত সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালার সমালোচনা করে বলেন, সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করে অবশ্যই এই নীতিমালার পরিবর্তন করতে হবে।

বিজেসির ট্রাস্টি নূর সাফা জুলহাস বলেন, নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন থাকার পরে কেন সাংবাদিকদের প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিতে হবে সেটি ভাববার বিষয়। এর পেছনে নির্বাচন কমিশনের অন্য কোনো ইনটেনশন আছে নাকি পজিশন আছে সেটাও ভেবে দেখতে হবে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.