ন্যাটোর পদক্ষেপে ফুঁসে উঠল চীন-রাশিয়া

0
108

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে পশ্চিমা এই সামরিক জোটের অন্তর্ভুক্ত বহু দেশ ইউক্রেনকে আরও সামরিক ও আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ন্যাটোর এই পদক্ষেপের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার প্রভাবশালী নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ইউক্রেনে ন্যাটোর সামরিক সহায়তা বৃদ্ধিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে। এদিকে এশিয়ায় ন্যাটোর সম্প্রসারণের কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে চীন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মেদভেদেভ বলেছেন, ‘ন্যাটোর সহায়তা ইউক্রেনে রাশিয়ার লক্ষ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। পুরো উন্মত্ত পশ্চিমারা অন্য কিছু বয়ে আনতে পারেনি। আসলে, এটা একটি শেষ পরিণতি। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘনিয়ে আসছে।’

এদিকে ন্যাটোর সদস্য না হয়েও টানা দ্বিতীয়বারের মতো জোটটির সম্মেলনে যোগ গিয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। এই চার দেশ আলাদাভাবে ন্যাটোর সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করতে যাচ্ছে, যা এশিয়ায় পশ্চিমা জোটটির সম্প্রসারণের ইঙ্গিত। ন্যাটোর সম্মেলনে চারটি দেশের উপস্থিতির সমালোচনা করেছে চীন। সেই সঙ্গে ন্যাটোর ঘোষণায় চীনকে পশ্চিমা সামরিক জোটটির স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করায় বেইজিং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রথম দিনের সম্মেলনের পর এক ঘোষণায় ন্যাটো নেতারা উল্লেখ করেন, চীন নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও শক্তি প্রদর্শনমূলক নীতি দ্বারা জোটের স্বার্থ, নিরাপত্তা ও মূল্যবোধের জন্য হুমকি তৈরি করছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসী হামলার সমালোচনা করার জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা। মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের চীনা মিশন এক বিবৃতিতে ন্যাটোর এই অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করে বলেছে, আমরা দৃঢ়ভাবে এটি প্রত্যাখ্যান করছি। ন্যাটো ইচ্ছাকৃতভাবে চীনের অবস্থানকে বিকৃত করছে এবং দেশটির সুনামহানি করতে চাচ্ছে। এশীয় প্রশান্ত অঞ্চলে ন্যাটোর গতিবিধির বিরোধিতা করে বেইজিং। চীনের ট্যাবলয়েড পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ন্যাটোকে অবিলম্বে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দিকে বাড়ানো কালো হাত সরিয়ে নিতে হবে।

এদিকে ইউক্রেন কবে ন্যাটোয় যোগ দিতে পারবে–এ বিষয়ে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে রাজি নয় জোটের মিত্ররা। ন্যাটো বলছে, শর্তপূরণ এবং মিত্ররা সম্মতি দিলেই ন্যাটোয় যোগ দিতে পারবে দেশটি, যা সময়সাপেক্ষ। এক বিবৃতিতে জোটটি জানায়, দ্রুতই ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করছেন জোটের নেতারা। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।

ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানে দেরি হওয়ার বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারছেন না প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। একে অযৌক্তিক বলে সমালোচনা করে মঙ্গলবার হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখনই ন্যাটোতে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করছেন। তবে গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, জলে-স্থলে ও অন্তরীক্ষে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করবে জি৭। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ ন্যাটোতে নিহিত।

বিশেষ আমন্ত্রণে মঙ্গলবার ভিলনিয়াসে পৌঁছানোর পরদিন ন্যাটো নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন জেলেনস্কি। জেলেনস্কির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ন্যাটো মহাসিচব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, আগের চেয়ে ন্যাটোর আরও কাছাকাছি ইউক্রেন। তবে যুদ্ধে রাশিয়া জিতলে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি হবে।

বিশ্বের সাতটি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের জোট জি৭ এবং ন্যাটো ইউক্রেনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। একে স্বাগত জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ন্যাটো সম্মেলনের ফল ভালো ছিল। ন্যাটোর সম্মেলনের ফাঁকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান চালাতে আগামী মাসে জোটের সদস্য দেশ রোমানিয়ায় ইউক্রেনের পাইলটদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে।

এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বলেছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমাদের অবস্থান পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত নেই। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, পশ্চিমা শক্তি মস্কোকে পরাজিত করার চেষ্টা বন্ধ না করা পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ থামবে না। খবর দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, বিবিসি ও আলজাজিরার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.