দেশে ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ২২ জন মানুষ খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন রংপুর বিভাগের মানুষ। এরপরই রয়েছে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দারা। খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা সবচেয়ে কম ঢাকা বিভাগের বাসিন্দাদের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খাদ্যনিরাপত্তা পরিসংখ্যান প্রকল্প ২০২২-এর আওতায় ‘ফুড সিকিউরিটি অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড এফআইইএস সার্ভে ২০২৩’ জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস ভবনে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। খাদ্যনিরাপত্তার ওপর দেশে এ ধরনের জরিপ প্রথমবারের মতো করল বিবিএস।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই প্রকল্প এ মাসেই শেষ হয়েছে। সারা দেশের ২৯ হাজার ৭৬০টি খানার সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে এই জরিপ করা হয়েছে। পরিবারগুলোকে মোট ৮ ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেগুলো হলো গত ১২ মাসে, এমন হয়েছিল কি না, যখন আপনার (কিংবা আপনার খানার কোনো সদস্যের) টাকা বা অন্য কোনো সম্পদের অভাবে, আপনাদের খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত খাবার থাকবে না—এমন কোনো দুশ্চিন্তা হয়েছিল; সম্পদের অভাবে, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খেতে পারেননি; সম্পদের অভাবে, মাত্র অল্প কয়েক ধরনের খাবার খেতে হয়েছিল; সম্পদের অভাবে, কোনো এক বেলার খাবার না খেয়ে থাকতে হয়েছিল; সম্পদের অভাবে, আপনার যতটুকু খাওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন, তার চেয়ে কম পরিমাণ খেতে হয়েছিল; সম্পদের অভাবে, আপনার খানায় খাবার শেষ হয়ে গিয়েছিল; সম্পদের অভাবে, ক্ষুধা লাগার পরও না খেয়ে থাকতে হয়েছিল এবং সম্পদের অভাবে, সারা দিনই না খেয়ে থাকতে হয়েছিল?
এই আট ধরনের প্রশ্ন করা হলে যেসব উত্তর পাওয়া গেছে, তাতে দেখা গেছে দেশের ২১ দশমিক ৯১ ভাগ মানুষ খাদ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। উত্তরদাতারা এসব প্রশ্নের কিছু ‘হ্যাঁ’ সূচক এবং কিছু ‘না’ সূচক উত্তর দিয়েছেন।
এসব উত্তরের ভিত্তিতে জরিপে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন রংপুর বিভাগের মানুষ। এই বিভাগের ২৯ দশমিক ৯৮ ভাগ মানুষ খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তারপর সিলেটে ২৬ দশমিক ৪৮ ভাগ, ময়মনসিংহে ২৬ ভাগ, রাজশাহীতে ২৫ দশমিক ০১ ভাগ, বরিশালে ২২ দশমিক ৮৩ ভাগ, খুলনায় ২২ দশমিক ০৭ ভাগ, চট্টগ্রামে বিভাগে ১৯ দশমিক ৬৬ ভাগ মানুষ খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন। সবচেয়ে কম, অর্থাৎ ঢাকা বিভাগের ১৬ দশমিক ৪০ ভাগ মানুষ খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন।
জরিপের এই ফল তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল হালিম। জরিপের বিষয়ে তিনি বলেন, আটটি প্রশ্নের সবগুলোতেই হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়েছেন দেশের শূন্য দশমিক ৮৩ ভাগ মানুষ। অর্থাৎ, তাঁরা বলেছেন গত এক বছরে সারা দিন না খেয়ে থাকা, ক্ষুধা লাগার পরও না খেয়ে থাকা, প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমাণ খাওয়াসহ সব ধরনের পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন। অর্থাৎ এই মানুষগুলো খাদ্য অনিরাপত্তার মধ্যে রয়েছেন।
জরিপে দেখা গেছে, তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা এ ধরনের মানুষ রয়েছেন সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগে। এই বিভাগের ১০০ জনের মধ্যে ১ দশমিক ৪২ জন মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারপরই আছেন চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগ, এই দুই বিভাগে যথাক্রমে ১ দশমিক ১৬ ভাগ ও ১ দশমিক ০৯ ভাগ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সবচেয়ে কম মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজশাহী বিভাগে, এখানকার দশমিক ৫১ ভাগ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ছাড়া ময়মনসিংহে দশমিক ৫৩ ভাগ, ঢাকায় দশমিক ৬৪ ভাগ, বরিশালে দশমিক ৬৭ ভাগ ও রংপুর বিভাগে দশমিক ৮৪ ভাগ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, ‘৪ কোটি ১০ লাখের মধ্যে ২৯ হাজার গৃহস্থালিতে এই জরিপ চালানো হয়েছে। কিছু ভুলত্রুটি থাকতে পারে, তবে আমরা এই কাজের প্রক্রিয়াগত ব্যাপারে শতভাগ সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। এই জরিপের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল খাদ্যনিরাপত্তা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া, যা এখান পাওয়া যাবে। এর ওপর ভিত্তি করে খাদ্য নীতিসহ অন্যান্য নীতি প্রণয়ন সহজ হবে।’
বিবিএস এখন যেসব পূর্বাভাস দিচ্ছে, তা সত্য হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা সত্য বলতে ভয় পাচ্ছি না। সত্য বলে সাবধান হতে পারছি।’
বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) খান মো. নুরুল আমিন, বিবিএসের কৃষি শাখার পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব দিপংকর রায়।