খাল সংস্কারে দুই বছর আগে ৯০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বিভাগীয় উন্নয়ন কমিটিতে পর্যালোচনার জন্য এখনো জমা দেয়নি।
রংপুর শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কারের জন্য দুই বছর আগে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল পরামর্শক নিয়োগ। কিন্তু আজও খাল সংস্কারের কাজ শুরু হয়নি। সংস্কারকাজ শুরু না হওয়ায় খালটি এখন ময়লা–আবর্জনার আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছে। খালের আশপাশের এলাকার মানুষ দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এটি মশার প্রজননক্ষেত্র হয়ে গেছে।
রংপুর নগরের উত্তর-পূর্ব দিক সিও বাজার এলাকা থেকে শুরু হয়ে শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মাহিগঞ্জ এলাকা ঘাঘট নদ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটারব্যাপী এই শ্যামাসুন্দরী খাল।
এই খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার কথা থাকলেও কার্যত তা হয় না। খালে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
রংপুর নগরের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দুই দফায় প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে খাল সংস্কার করা হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। সিটি করপোরেশন নতুন করে খালটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
খালের বর্তমান দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি সদরুল আলম বলেন, ইতিপূর্বে খালের পেছনে অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু তা কোনো কাজে আসেনি। খালটি সংস্কারে এখন শুধু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে রূপ নেয় না। ফলে পানি প্রবাহিত হওয়ার খালটি ভরাট হয়ে ঐতিহ্য একেবারেই হারাতে বসেছে। খালটিতে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। r
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কাচারিবাজার থেকে ইঞ্জিনিয়ারপাড়া হয়ে সদর হাসপাতালের পেছন দিয়ে গোমস্তাপাড়া সেতু হয়ে কামারপাড়া মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার খাল বেহাল। কাদা আর ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। সেই সঙ্গে ঝোপজঙ্গলে ভরপুর। পানির প্রবাহ নেই। ময়লা পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
সদর হাসপাতাল এলাকা, গোমস্তাপাড়া ও মুলাটোল সেতু এলাকায় খাল পাড়ে ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। কেরানীপাড়া ডিসির মোড়ের পাশে খালপাড় ভেঙে গেছে। খালের পানি জমাট বেঁধে আছে। এ ছাড়া খালের অধিকাংশ এলাকায় কাদা, ময়লা ও ঝোপজঙ্গলে খাল নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মুলাটোল এলাকার বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, ‘এই খালটিই এখন শহরের মশা–মাছির প্রজননস্থল হয়ে উঠেছে। এই খাল সংস্কার না হওয়ায় নগরবাসীর দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কার, খালের ওপর সেতু নির্মাণ ও খাল খননের জন্য ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথম দফায় খাল সংস্কারের কাজ হয়। সেই সঙ্গে খালের দুই পাড়ে সিমেন্টের তৈরি খুঁটি বসানোসহ খাল খনন ও খালের ওপর তিনটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়াও ২০০৮-০৯ সালে এই খালের পেছনে আরও ১২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
শ্যামাসুন্দরী খাল সংস্কারে প্রকল্প গ্রহণ ও পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিসুজ্জামান বলেন, খাল সংস্কার ও পুনঃখননের জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দরপত্রের মাধ্যমে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা প্রায় ৯০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তবে এটি বিভাগীয় উন্নয়ন কমিটিতে পর্যালোচনার জন্য এখনো জমা হয়নি। এই উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক বিভাগীয় কমিশনার ও সদস্যসচিব সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এটি পর্যালোচনার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আগের মেয়রের আমলে খাল সংস্কার করা হয়েছে। আমার গত পাঁচ বছরের আমলে খালের ১৭০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। খাল সংস্কারে ২০২০ সালে ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় পরবর্তী সময়ে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে দেড় বছর আগে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মাত্র পাঁচ মাস হয়েছে। এই প্রকল্পটি এবার জোর দিয়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করব।’