ক্লাস ফাইভেই সিনেমার প্রস্তাব, সেদিনের রত্নার শাবানা হয়ে উঠার গল্প

0
178
অভিনেত্রী শাবানা

তখন তার বয়স সবে ৯,পড়েন ক্লাস ফাইভে। রত্না নামের লাজুক এক কিশোরি। সেই সময়েই সিনেমা করার প্রস্তাব পান তিনি। যদিও সিনেমার কিছুই তখন বোঝতেন না তিনি। তাই সেই প্রস্তাবে কিছুই আসে যাচ্ছিল না তার। কিন্তু বাবা তো বুঝতেন, তাই বিস্মিত হলেন! বললেন,  আমার মেয়ে তো কারও সামনেই তো আসতে চায় না, ও কীভাবে অভিনয় করবে!’

যে মেয়েটি মানুষের সামনে আসতে লজ্জা পেতেন সেই মেয়েটিই  হয়ে এক দশকের ব্যাবধানে হয়ে উঠলেন  ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা! যাকে ছাড়া বাংলা সিনেমার ইতিহাসটাই অসম্পূর্ণ! তিনি কিংবদন্তি শাবানা।

আজ  (১৫ জুন) তার জন্মদিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে  চট্টগ্রামের রাউজানে তার জন্ম।  সেসময় বাবা-মা নাম রাখেন আফরোজা সুলতানা রত্না। ক্লাস ফাইভে সিনেমার প্রস্তাব পাওয়া মেয়েটি পড়াশোনায় আর মন বসাতে পারেনি। তাই  প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় খুব একটা শিক্ষিত হতে পারেনি। তাতে কি? সাফল্য তো থেমে থাকেনি। নিজ অভিনয় মেধা দিয়ে  কড়ায়-গণ্ডায় বুঝিয়ে দিয়েছেন সাফল্য।

ঢালিউডের স্টারমেকার নির্মাতা এহতেশাম ছিলেন তার বাবার খালাতো ভাই। সেই সূত্রেই অভিনয়ের সুযোগটা আসে। সিনেমার জন্য তাকে আলাদা নামও দেন এহতেশাম। তবে সম্পর্কের খাতিরে সুযোগ পেলেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন নিজের যোগ্যতায়, চেষ্টায়। যার সুবাদে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে প্রায় তিনশ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হলো, ‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবনসাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’, ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ প্রভৃতির মত অসংখ্য সিনেমা।

১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে তার রুপালি অধ্যায়ের সূচনা হয়। এরপর আরও কয়েকটি সিনেমায় নৃত্যশিল্পী ও অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। নায়িকা চরিত্রে তাকে প্রথম দেখা যায় ১৯৬৭ সালে, এহতেশাম পরিচালিত ‘চকোরী’তে। ছবিটি ব্যবসাসফল হয়, আর তিনিও বনে যান তারকা। অতঃপর শুধু এগিয়ে যাবার পালা। ব্যস্ততায় ডুবে একের পর এক সিনেমা করেছেন আর নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। নাদিম, রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, জসীম, সোহেল রানাসহ জনপ্রিয় নায়কদের সঙ্গে জুটিবেঁধে উপহার দিয়েছেন বহু নন্দিত সিনেমা।

নায়িকা কিংবা অভিনেত্রী হিসেবে তার মতো প্রাপ্তি ঢাকাই শোবিজে কারও ঝুলিতে নেই। পুরস্কারের বেলাতেও তার রেকর্ড কেউ ভাঙতেই পারেনি আজ অব্দি। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে নয়বার, প্রযোজক হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। একই আয়োজনে ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন তিনি।

সিনে জগতে একটি ধারণা প্রচলিত ছিল যে বিয়ের পর নায়িকাদের জনপ্রিয়তা কমে যায়। কিন্তু এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতেই ২১ বছর বয়সে বিয়ে করেন এই অভিনেত্রী। এরপর সংসার আর সিনেমা, দুটোই সমানভাবে সামলেছেন।

তবে ১৯৯৭ সালে এসে তার মনে হয়, ক্যারিয়ারে অনেক সময় দিয়েছেন, এবার সন্তানদের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া যাক। তাই আচমকাই সিনেমা থেকে বিদায় নেন। আর স্থায়ী হন যুক্তরাষ্ট্রে। সেই থেকে এখনও তিনি মার্কিন মুলুকে বসবাস করছেন। মাঝে মধ্যে দেশে আসেন, অতিথি পাখির মতো ঘুরে আবার ফিরে যান। একাধিকবার সিনেমায় প্রত্যাবর্তনের বার্তাও দিয়েছেন বটে। কিন্তু তা আর বাস্তবে পরিণত হয়নি। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, সিনেমা থেকে বিদায় নেওয়ার ২৬ বছর হয়ে গেলেও এখনও দর্শক তাকে ভালোবাসে, মিস করে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.