মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাতে বাংলাদেশের ব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে

0
112
বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (সিএআর) অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্নে রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনের এসব দেশের সিএআর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা সিএআরের এই চিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি। একটি ব্যাংকের সিএআর যত বেশি হয়, সেই ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য তত ভালো বলে মনে করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই ব্যাংকগুলোর সিএআর কয়েক বছর ধরে বাড়ছিল। তবে ব্যতিক্রম হয়েছে গত বছর, যখন ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ব্যাংকগুলোর সিএআর কমেছে। গত বছরে অবশ্য বাংলাদেশের ব্যাংগুলোর সিএআর বেড়েছে। তবে গত বছর ভালো করলেও বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সিএআর পরিস্থিতি সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ রয়েছে।

২০২২ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত ছিল ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তবে ওই সময়ে পাকিস্তানের ব্যাংকগুলোর এই অনুপাত ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, ভারতের ১৬ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন পরিস্থিতি কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। তবে ২০১৭ সাল থেকে দেশটির ব্যাংকগুলোর সিএআর কখনো বাড়ছে, আবার কখনো কমছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সিএআর ছিল ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। পরের বছর এই অনুপাত কমে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও ২০১৯ সালে তা আবার বেড়ে হয় ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২১ সালে এটি দাঁড়ায় ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে, যা আবার ২০২২ সালে বেড়ে হয় ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

ব্যাংকিং খাতের বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দেশে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। তবে সে অনুপাতে মূলধন বাড়ছে না। আবার ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদও বাড়ছে। অনেক ব্যাংক প্রকৃত আর্থিক চিত্র প্রকাশও করছে না। ফলে দেশের ব্যাংকগুলোর প্রকৃত মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী না হয়ে ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, সরকারি খাতের বেশির ভাগ ও বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি প্রকট। এই কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে অবস্থান করছে দেশের ব্যাংকগুলোর সিএআর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এই পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বেশি। ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ খেলাপি ঋণ। এর বাইরে পুনঃ তফসিল করা ঋণের স্থিতি ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। পাশাপাশি অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯ হাজার ৭২১ কোটি টাকায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.