কোরবানির বর্জ্য নিষ্কাশনে পদ্ধতি এবং আমাদের করণীয়

0
188

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। মুসলমান ধর্মাবলম্বী মানুষ ধর্মীয় বিধিমালা অনুযায়ী চাঁদের ওপর নির্ভর করে বছরের দুটি ঈদ উদ্‌যাপন করে থাকেন। একটি হলো ঈদুল ফিতর ও আরেকটি ঈদুল আজহা। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম মুসলিমপ্রধান দেশ হওয়ায় এখানকার মানুষ প্রতিবছর এই দুটি ঈদ ব্যাপক পরিসরে অনেক আনন্দ ও উৎফুল্লের সঙ্গে উদ্‌যাপন করে থাকেন।

আজ ঈদুল আজহা। এ দিনে একজন মুসলমানের কাছে সবচেয়ে বড় আমল ও আনন্দের কাজ হলো পশু কোরবানি করা। প্রতিবছর আমাদের দেশে কোরবানির ঈদে লাখ লাখ পশু কোরবানি দেওয়া হয়। এত বিপুলসংখ্যক পশু যখন কোরবানির দেওয়ার কথা আসে, তখন মাথায় আসে এসব পশুর বর্জ্য নিষ্কাশনের বিষয়টি। প্রতিবছর এই বর্জ্য সঠিকভাবে নিষ্কাশিত না হওয়ার কারণে  অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় মানুষকে। অনির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি দেওয়া এবং বর্জ্য ফেলার কারণে প্রতিবছর চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তাই এ বছর কোরবানির ঈদেও যেন এ ভোগান্তি পোহাতে না হয়, তার জন্য আমাদের বেশ কিছু করণীয় রয়েছে।

কোরবানির বর্জ্য নিষ্কাশনের আগে জানতে হবে কোরবানির বর্জ্য বলতে কোনগুলোকে বোঝায়। সহজভাবে বলতে গেলে কোরবানির বর্জ্য বলতে পশুর যে অংশ খাই না, ফেলে দেওয়া হয়, তাকে বোঝায়। যেমন রক্ত, পশুর পেটে থাকা খাবারের বর্জ্য, চামড়া, দাঁত ইত্যাদি।

পশু জবাই এবং মাংস কাটার সময় এই উচ্ছিষ্ট অংশ যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়ার কারণে দুই–তিন দিন পরে এগুলো পচে বাতাসের সঙ্গে মিশে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং পচা মাংস থেকে রোগজীবাণু ছড়িয়ে মানুষকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত করে। দুর্গন্ধের কারণে চলাচলের বিঘ্ন দূর করতে এবং রোগজীবাণু থেকে মুক্তি পেতে আমাদের বেশ কিছু করণীয় রয়েছে।

পশু কোরবানি দেওয়ার প্রথম ধাপ হলো স্থান নির্বাচন করা। বসতবাড়ি থেকে যতটা দূরে পশু কোরবানি দেওয়া যায়, ততটা দূরে কোরবানি দেওয়া উচিত অথবা এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে, যেখান থেকে পশুর বর্জ্য নিষ্কাশন করতে সহজ হয়। পশু কোরবানি দেওয়ার স্থানে বেশি করে গর্ত খুঁড়ে রক্ত মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। এমনভাবে রক্ত মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে, যাতে কোনো প্রাণী মাটি খুঁড়ে গন্ধ না ছড়াতে পারে। মাংস কাটার পরে উচ্ছিষ্ট বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে; ভালো হয় মাটিতে পুঁতে ফেললে।

শহরে যাঁরা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন আছেন, তাঁরা আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে কোরবানি না দিয়ে কয়েকজন মিলেমিশে একই স্থানে কোরবানি দেওয়ার চেষ্টা করবেন; এতে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের বর্জ্য নিষ্কাশন ও অপসারণের কাজ সহজ হবে। যদি কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানি না দিতে পারেন, তাহলে নিজ দায়িত্বে পশুর উচ্ছিষ্ট বর্জ্যগুলো কাছের ডাস্টবিনে ফেলে আসবেন। পশু কোরবানি দেওয়ার স্থান ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবেন এবং জীবাণু যাতে না ছড়াতে পারে, সে জন্য রক্ত মাখানো স্থানে বিভিন্ন জীবাণুনাশক যেমন স্যাভলন মিশানো পানি ও ব্লিচিং ছিটাবেন।

এ ছাড়া পশুর উচ্ছিষ্ট বিশেষ অংশ হলো চামড়া। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে চামড়া বিক্রি করে দিতে হবে অথবা স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা বা এতিমখানায় দান করে দিতে হবে। যদি আমরা ওপরের বিষয়গুলো অনুসরণ করে পশু কোরবানি দিতে পারি, তাহলে প্রতিবছর কোরবানি–পরবর্তী আমাদের যে সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে হয়, সে সমস্যাগুলো থেকে রেহাই পেতে পারব।

তাই আসুন, আমরা সচেতন হই। আমাদের সামান্য কিছু নিয়মকানুন অবলম্বন করার মাধ্যমে প্রতিটি কোরবানির ঈদ হবে সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.