লক্ষ্যমাত্রা কমছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির, বাড়ছে মূল্যস্ফীতির

0
90

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে থাকা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হচ্ছে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

অন্যদিকে বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি কমার তেমন লক্ষণ নেই। তাই চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে তা ৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে চাইছে সরকার।

আজ বৃহস্পতিবার আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সার্বিক অর্থনীতি ও বাজেট ব্যবস্থাপনা মূল্যায়নে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে  ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে দেশে মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি ও ব্যাংক খাত থেকে সরকারি ঋণ গ্রহণের তথ্যও উপস্থাপন করা হবে। মুদ্রা সরবরাহ ও লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর সরকারের অর্থনৈতিক নীতি কৌশলের প্রভাব পর্যালোচনা করা হবে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক প্রভাব এবং অভ্যন্তরীণ নানা কারণে সংকটের মুখে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থনীতির বেশ কিছু প্রধান সূচকে রয়েছে নেতিবাচক প্রবণতা। ঠিক এমন সময় জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। তাই সব মিলিয়ে বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, তা অর্জন করা সম্ভব নয়।

দেশের রপ্তানি আয় পরিস্থিতি যেমন ভালো যাচ্ছে না, তেমনি বিনিয়োগের জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিও কমে গেছে।  গত অক্টোবর ও নভেম্বর টানা দুই মাস রপ্তানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি এসেছে। গত নভেম্বরে তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই মাসের তুলনায় কমেছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এর আগে গত অক্টোবরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় কমে ১৪ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে। শিল্পের কাঁচামালে কমেছে ৩৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নেওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমছে। এসব বিবেচনায় বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও উৎপাদন পরিস্থিতি ভালো নয় বলেই ইঙ্গিত মিলছে।

আর সরকারি বিনিয়োগেও চলছে মন্থরগতি। গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ হার গত আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। সব মিলিয়ে তাই বাজেটে থাকা জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত নভেম্বরে পয়েন্ট টু ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার সামান্য কমলেও তা প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশের মতো ছিল। ১২ মাসের গড় হিসাবে মূল্যস্ফীতি কমেনি। নভেম্বর পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। অক্টোবর পর্যন্ত যা ছিল ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গড় মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে গত জুন থেকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান প্রবণতায় মূল্যস্ফীতি বাজেটে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রায় রাখা সম্ভব নয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.