কে হচ্ছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী

0
113
কর্ণাটকের ফলাফলে কংগ্রেস এগিয়ে থাকার খবরে দলের নেতা-কর্মীদের উল্লাস। আজ শনিবার তোলা

বেলা যত গড়িয়েছে, তত স্পষ্ট হয়ে উঠছে—কর্ণাটকে কংগ্রেস একাই সরকার গড়তে চলেছে। এখন বড় হয়ে উঠেছে একটাই প্রশ্ন—কে হতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী? কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এত দিন ধরে এ বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। বারবার বলেছে, ভোটের পরেই পরিষদীয় দলের সদস্যদের বৈঠকে তা নির্ধারিত হবে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কাল রোববার সব জয়ী বিধায়ককে বেঙ্গালুরুতে আসতে বলেছে।

ভারতের কর্ণাটকের সমসাময়িক রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দুই মুখ সবচেয়ে পরিচিত—২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫ বছর ক্ষমতায় থাকা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং প্রদেশ সভাপতি ডি কে শিবকুমার। সিদ্দারামাইয়ার বয়স ৭৬। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগেই তিনি জানিয়ে দেন, এটাই তাঁর শেষ ভোট। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি শেষবারের মতো মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি জানিয়ে রাখলেন।

সিদ্দারামাইয়া অনগ্রসর ‘কুড়ুবা’ সম্প্রদায়ের মানুষ। কিন্তু রাজ্যের সব জনগোষ্ঠীর মধ্যেই তিনি জনপ্রিয়। অসম্ভব ভালো এই বক্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ কেউ সেভাবে তোলেনি। তাঁর আমলে প্রশাসনে কুড়ুবা সম্প্রদায়কে বেশি সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তাতে প্রভাবশালী লিঙ্গায়েত ও ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল। বেশ কিছু পিএফআই-এসডিপিআই (পিএফআইয়ের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে এই সংগঠন নিষিদ্ধ) সমর্থককে মুক্তি দেওয়ার একটা অভিযোগও তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছিল। কিন্তু এসব সত্ত্বেও তাঁর সামাজিক বিন্যাস, বিশেষ করে অনগ্রসর, তফসিল জাতি-উপজাতি ও মুসলমানদের সমর্থন (কান্নাডিগা ভাষায় যা ‘আহিন্দা’) কংগ্রেসকে বাড়তি সমর্থন জুগিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রিত্বের বড় দাবিদার তিনি অবশ্যই।

সেই লক্ষ্যে জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘হাইকমান্ডকে’ খুশি রাখতে সিদ্দারামাইয়া বলেন, ‘এই ফল আগামী বছরের লোকসভা ভোট জেতার আগে আরও এক পদক্ষেপ। আশা করি, সব বিজেপিবিরোধী দল জোট বাঁধবে। বিজেপিকে হারাবে। আশা করি, রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হবেন।’

বিধানসভার ফল ঘোষণা দিন আজ শনিবার দলের সদস্যদের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার ডি কে শিবকুমার
বিধানসভার ফল ঘোষণা দিন আজ শনিবার দলের সদস্যদের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার ডি কে শিবকুমার

সিদ্দারামাইয়ার ছেলে যতীন্দ্র আজ শনিবার এএনআইকে বলেন, ‘রাজ্যের স্বার্থে আমার বাবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া উচিত। ছেলে হিসেবে সেটা আমার কামনা। কিন্তু রাজ্যবাসী হিসেবেও বলব, বাবার আমলে এই রাজ্যে সুপ্রশাসন ছিল।’

সিদ্দারামাইয়া জনতা দল থেকে জেডিএস এবং সেখান থেকে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। শিবকুমার কিন্তু বরাবরের কংগ্রেসি। তাঁর বয়স ৬০। তিনি প্রভাবশালী ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ভুক্ত। ওল্ড মাইসুরুর (দক্ষিণে পুরোনো মহীশুর) মোট ৬৪ বিধানসভায় তাঁর প্রভাব। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া ও তাঁর ছেলে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর দৌলতে এই অঞ্চল জেডিএসকে বিপুলভাবে সমর্থন জানিয়ে এসেছে। প্রধানত ভোক্কালিগা সমর্থনের জোরেই গতবারের ভোটে জেডিএস ৩৭ আসন পেয়েছিল। এবার সেই গড় ভেঙে কংগ্রেস দক্ষিণ মহীশুরে সিংহভাগ আসন জিতেছে। এর প্রধান কৃতিত্ব অবশ্যই শিবকুমারের।

শিবকুমার সম্পদশালী নেতা। সফল ব্যবসায়ী। সংগঠক হিসেবেও দারুণ। কংগ্রেসের বিপদে-আপদে সংকটে বারবার বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সম্ভাব্য ভাঙন রুখেছেন। অন্য রাজ্যের সংকটের সময়েও মুশকিল আসান হয়ে দাঁড়িয়েছেন। গান্ধী পরিবারের কাছের ও বিশ্বাসভাজন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বিস্তর। ইডি, সিবিআই বারবার তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে, তাঁকে জেরা করেছে।

আজ জয় নিশ্চিত হওয়ার পর আবেগাপ্লুত শিবকুমার কেঁদে ফেলেন। বলেন, ‘সোনিয়া গান্ধীকে আমি কথা দিয়েছিলাম, কর্ণাটক জিতিয়ে দেব। সোনিয়া, রাহুল, প্রিয়াঙ্কা, মল্লিকার্জুন খাড়গেকে বলেছিলাম, জয় দেবই। আমি খুশি, কথা রাখতে পেরেছি।’ কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘আমি ভুলতে পারব না, সোনিয়াজি আমার সঙ্গে দেখা করতে জেলেও গিয়েছিলেন। কংগ্রেস অফিস আমাদের মন্দির। সেখানেই আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’
মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে এই দুই নেতা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু বিস্ময়করভাবে সেই লড়াইয়ের কোনো প্রতিফলন এবার কংগ্রেসে দেখা যায়নি। রাজস্থানের কংগ্রেসের সঙ্গে (সেখানে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের সঙ্গে শচীন পাইলটের ক্ষমতার লড়াই এখনো তীব্র) কর্ণাটকের এটাই পার্থক্য।

মুখ্যমন্ত্রিত্বের জোরালো দাবিদার সিদ্দারামাইয়া
মুখ্যমন্ত্রিত্বের জোরালো দাবিদার সিদ্দারামাইয়া

এই চিরায়ত লড়াইয়ের মধ্যে এবার নতুন মুখ হিসেবে হাজির দলিত নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। এর আগে তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে খাড়গের নাম উঠলেও তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি। এবার কংগ্রেস সভাপতি খাড়গেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি নেই বলে ভোটের আগে শিবকুমার জানিয়ে দিয়েছেন। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, নিজে মুখ্যমন্ত্রী না হতে পারলে তিনি চান না সিদ্দারামাইয়া মুখ্যমন্ত্রী হন। এই পরিস্থিতিতে কাল নতুন বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলে শীর্ষস্থানীয় নেতারা বোঝার চেষ্টা করবেন, কার প্রতি অধিকাংশ বিধায়কের সমর্থন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.