কুষ্টিয়ায় সাংবাদিকের ওপর হামলা, উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ

0
55
হামলায় আহত সাংবাদিক হাসিবুর রহমান
কুষ্টিয়ায় কর্মরত বেসরকারি টেলিভিশন এশিয়ান টিভির স্টাফ রিপোর্টার হাসিবুর রহমান ওরফে রিজুর (৪৬) ওপর হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে কুষ্টিয়া শহরসংলগ্ন হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের হাটশ হরিপুর বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
 
হামলায় হাসিবুরের দুই পা, দুই হাত ও মাথায় গুরুতর জখম হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার শেষে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
 
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে রাতেই কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নেতা-কর্মীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। কুষ্টিয়া মডেল থানায় গিয়েও বিক্ষোভ করেন। সাংবাদিক নেতারা দোষীদের ধরতে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেন। পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তার আশ্বাসে সাংবাদিকেরা তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।
 
হাসিবুর হাটশ হরিপুর গ্রামের আমজাদ মালিথার ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক সত্য খবর পত্রিকার সম্পাদক।
 
পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও হাসিবুরের পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসিবুর বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ৮ থেকে ১০ যুবক তাঁকে ঘিরে ধরেন। তাঁদের হাতে থাকা হকিস্টিক ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন। মাটিতে ফেলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট দুই পা, দুই হাত ও মাথায় আঘাত করেন। শরীরের বিভিন্ন জায়গায়ও হকিস্টিক দিয়ে পেটানো হয়। এ সময় আরও ১৫ থেকে ২০ জন যুবক-কিশোর মারধরকারীদের ঘিরে রাখেন। বাজারে থাকা লোকজন এগিয়ে আসার সাহস পান না।
 
খবর পেয়ে পুলিশ ও হাসিবুরের স্বজনেরা গুরুতর জখম অবস্থায় হাসিবুবকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করানো হয়।
 
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, হাসিবুরের দুই পা, দুই হাত ও মাথায় আঘাতে জখম হয়েছে। মাথায় চারটি সেলাই পড়েছে। দুই পা থেঁতলানো। বাঁ হাতের রক্তনালি কেটে গেছে। এটা গুরুতর। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি মারধর রয়েছে। তাঁর অবস্থা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
 
রাত সাড়ে আটটার দিকে হাসিবুরকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। হাসপাতালে কুষ্টিয়ায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা ভিড় করেন। তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার সামনে যান। সেখানে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রাসেল, ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা যান।
 
কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর, সাধারণ সম্পাদক আবু মণি জুবায়েদ ও কুষ্টিয়া টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনিসুজ্জামান ডাবলুর সঙ্গে বৈঠক করেন। সাংবাদিক নেতারা দোষীদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের সময়সীমা বেঁধে দেন। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, রাতের মধ্যে একটা ভালো খবর দেওয়া হবে।
 
এদিকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেওয়ার সময় হাসিবুর সাংবাদিকদের কাছে ঘটনায় জড়িত কয়েকজনের নাম বলে গেছেন। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। হাসিবুর বলেন, হামলাকারীর মধ্যে রয়েছে হাটশ হরিপুর এলাকার শিপন, আসলাম, মুরাদ, ফারুক, সাজ্জাদসহ আরও ১০ থেকে ১৫ জন।
 
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, পুলিশের কর্মকর্তারাও হাসিবুরের দেওয়া নামগুলোর প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন। হামলার পেছনে পারিবারিক বা এলাকাভিত্তিক কোনো বিরোধ থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সংবাদ প্রচারের জন্য হামলার ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা আপাতত মেলেনি। তার পরও সবকিছু বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.