কিডনি ভালো রাখতে রোজ কয় লিটার পানি খাবেন

0
26
ইফতার বা সাহ্‌রিতে একবারে বেশি পানি খাওয়া যাবে না

কিডনি ভালো রাখতে যে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া প্রয়োজন, এটা অজানা নয়। দেহের ভেতর চলমান বহু ক্রিয়া–বিক্রিয়ার জন্যও পানি প্রয়োজন। সাধারণভাবে বলা হয়, সুস্থ থাকতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রোজ আট গ্লাস বা দুই লিটার পানি খাওয়া উচিত। আদতে কি এই হিসাবটা ঠিক?

দেহে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন বর্জ্য কিডনির মাধ্যমে বেরিয়ে যায় রোজ। কিডনি যদি এই কাজ সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে বর্জ্য জমা হতে থাকে দেহে। জমা হয় বাড়তি পানিও। এই পানি এবং বর্জ্য দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিডনির সমস্যা জটিল আকার ধারণ করলে এই পানি এবং বর্জ্য বের করার জন্য ডায়ালাইসিস পর্যন্ত লাগতে পারে। বুঝতেই পারছেন, রোজ কতটুকু পানি খাওয়া প্রয়োজন, তা জেনে রাখা কতটা জরুরি।

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান জানালেন, একজন ব্যক্তির ঠিক কতটা পানি প্রয়োজন, তা নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়ের ওপর। এসব বিষয়ের মধ্যে আছে বয়স, দেহের গড়ন, কায়িক শ্রম, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক অবস্থা, পরিবেশের তাপমাত্রা প্রভৃতি। তাই ঢালাওভাবে একটা পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সুযোগ নেই।

কম বা বেশি পানির কিছু বিপদ

খুব কম কিংবা খুব বেশি পানি খাওয়া হলে কিডনির কার্যক্ষমতা ব্যাহত হতে পারে। পানি খাওয়া কম হলে প্রস্রাবে সংক্রমণ হতে পারে, কিডনি বা মূত্রনালিতে পাথর হতে পারে। খুব বেশি পানি খেলে আবার রক্তে লবণের মাত্রা কমে যেতে পারে। অতিরিক্ত পানি খেয়ে ফেললে বমিভাব, পেশিতে খিঁচ ধরা, খিঁচুনি হওয়া এমনকি জ্ঞান হারানোর মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে।

পানির পরিমাণ ঠিক করবেন যেভাবে

  • আপনার জন্য রোজ ঠিক কতটা পানি প্রয়োজন, তা আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন। কত গ্লাস বা কত লিটার পানি খেতে হবে, তা আপনি বুঝতে পারবেন নিজের শরীরের ভাষাতেই।
  • প্রস্রাব করার সময় রং খেয়াল করুন। হালকা খড়ের মতো হলদে রং হলে বুঝতে হবে পানি খাওয়ার পরিমাণ ঠিক আছে। তবে মনে রাখবেন, কিছু খাবার এবং ওষুধের জন্য প্রস্রাবের রং বদলে যেতে পারে।
  • পর্যাপ্ত পানি খেলে আপনার রোজ ৪-৮ বার স্বাভাবিক পরিমাণে প্রস্রাব হবে, আপনি তৃষ্ণার্ত অনুভব করবেন না কিংবা অন্য সবকিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও আপনি ক্লান্তি অনুভব করছেন, এমনটা হবে না। এসবের অন্যথা হলে বুঝতে হবে পানি খাওয়ার পরিমাণ ঠিক নেই।

  • গাঢ় প্রস্রাব হলে, পরিমাণে কম হলে, ২৪ ঘণ্টায় চারবারের কম প্রস্রাব হলে, মুখ শুকিয়ে গেলে বা কারণ ছাড়াই ক্লান্তি অনুভব করলে আপনি পানিশূন্যতায় ভুগছেন বলে ধরে নিতে পারেন।
  • অন্যদিকে প্রস্রাব একেবারে রংহীন হলে, পরিমাণে বেশি হলে, রোজ ৮ বারের বেশি প্রস্রাব হলে বুঝতে হবে অধিক পরিমাণ পানি খাচ্ছেন আপনি।
  • খেয়াল রাখবেন, আবহাওয়া খুব গরম হলে, অতিরিক্ত ঘাম হলে, প্রচণ্ড শারীরিক পরিশ্রম করলে কিংবা জ্বর হলে পানির পরিমাণ খানিকটা বাড়িয়ে দিতে হয়। আবার আবহাওয়া ঠান্ডা হলে আপনি এমনিতেই পানি কম খেতে পারবেন।
  • কিডনিতে পাথর হওয়ার ইতিহাস থাকলে বা ঝুঁকি থাকলে অবশ্যই একটু বেশি পানি খাওয়া উচিত। অন্য কোনো কারণে পানি খাওয়া বিধিনিষেধ না থাকলে দিনে অন্তত তিন লিটার পানি খাওয়া উচিত।

কেবল পানিই নয়

বিভিন্ন পানীয় এবং খাবার থেকেও পানি পাই আমরা। স্যুপ, ডাল, পাতলা ঝোলের তরকারি প্রভৃতি পানির উৎস। তবে কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক বা অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় গ্রহণ না করাই ভালো, তাতে কিডনির ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে প্রস্রাব বেশি হয়। তাই পানির ঘাটতিতে ভুগতে হতে পারে। এই বিবেচনায় হারবাল চা কিংবা ডিক্যাফ কফি তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর পানীয়।

ফলমূল, ফলের রস এবং লাউ, চিচিঙ্গা, কুমড়ার মতো অনেক সবজিতেই পানি পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে গ্রহণ করা পানির পরিমাণ ঠিক থাকলেই হলো। তাতেই সুস্থ থাকবে আপনার কিডনি।

রাফিয়া আলম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.