কাশ্মীর ইস্যু উসকে দিল পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি

0
786
বিমল গুরুং।

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বিষয়টি দার্জিলিংয়েও পৃথক রাজ্যের দাবিকে উসকে দিয়েছে। দার্জিলিংয়ের পৃথক রাজ্য গড়ার নেতা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গুরুং আত্মগোপনস্থল থেকে এক বার্তায় দার্জিলিংয়েও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন।

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছে ভারতের বিজেপি–শাসিত মোদি সরকার। জম্মু–কাশ্মীর সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হয়েছে গত সোম ও গতকাল মঙ্গলবার ভারতের আইনসভার দুই কক্ষে। সোমবার বিলটি পাস হয় ভারতের আইনসভার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়। আর গতকাল বিলটি পাস হয় নিম্নকক্ষ লোকসভায়। ফলে, জম্মু–কাশ্মীর দ্বিখণ্ডিত হয়ে মর্যাদা হারায় পৃথক রাজ্যের। একই সঙ্গে এই রাজ্যকে ভাগ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়া হয়। একটি জম্মু ও কাশ্মীর এবং অন্যটি লাদাখ। কাশ্মীর হলো মুসলিম–অধ্যুষিত। জম্মু হিন্দু–অধ্যুষিত। আর লাদাখ বৌদ্ধ–অধ্যুষিত। ফলে, ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে গেল পৃথক রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর। জম্মু ও কাশ্মীর হয়ে গেল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। জম্মু ও কাশ্মীর এখন নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্রীয় সরকার।

জম্মু ও কাশ্মীর দ্বিখণ্ডিত হওয়ার পর গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং আত্মগোপনস্থল থেকে এক বার্তায় মোদি সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে ঝুলছে আন্দোলনের নামে মানুষ খুন, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ হত্যাসহ কয়েকটি মামলা। এই মামলার জেরে বিমল গুরুং আত্মগোপন করে আছেন অজ্ঞাত স্থানে। এবারের লোকসভা নির্বাচনেও বিমল গুরুং প্রকাশ্যে আসতে পারেননি। উচ্চ আদালতে জামিনও পাননি। ফলে, বিমল গুরুং এখন পালিয়ে থেকে গোপন আস্তানা থেকে মোদির জম্মু–কাশ্মীর নিয়ে সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি মোদিকে পাঠানো বার্তায় বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি, দার্জিলিংয়েও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করলে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে।’

দার্জিলিং।

 

বিমল গুরুং বলেছেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি নিয়ে আন্দোলনে আছি। এই দাবি আদায়ে আমরা আন্দোলনে থাকব।’

আর এই বার্তার পর পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উঠে এসেছে নতুন প্রশ্ন, তবে কি মোদি সরকার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকেও ভেঙে দেবেন? বিমল গুরুংদের দাবিকে সমর্থন জানাবেন? যদিও ইতিমধ্যে পাহাড়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিমল গুরুংয়ের এই প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে। শুধু তা–ই নয়, বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে জনমুক্তি মোর্চার যে নেতা মুখ্যমন্ত্রী মমতার পাশে দাঁড়িয়ে বিমল গুরুংদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে ধরেছিলেন, সেই নেতা বিনয় তামাংও কেন্দ্রশাসিত গোর্খাল্যান্ডের দাবির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বিনয় তামাংকে দিয়ে মমতা ভেঙে দিয়েছিলেন বিমল গুরুংয়ের পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের আন্দোলন; এমনকি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকেও। শুধু তা–ই নয়, দার্জিলিংয়ের স্বশাসিত সংস্থা গোর্খাল্যান্ড টেরিটরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) প্রধান পদেও বসিয়েছেন বিনয় তামাংকে।

২০১৭ সালের জুন মাসে বিমল গুরুংদের পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য নিয়ে প্রায় তিন মাস ধরে চলমান আন্দোলনও স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন মমতা। এত কিছু করার পরও মমতা এবারের দার্জিলিং লোকসভা নির্বাচন এবং দার্জিলিং বিধানসভার উপনির্বাচনেও জয়ী হতে পারেনি। জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। আর এবারের এই নির্বাচনে বিমল গুরুংয়ের দল এবং নেতা-কর্মীরা বিজেপির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.