কাশিমপুর কারাগারে একযোগে হামলার ছক কষেছিল জঙ্গিরা

0
157
জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ (ছবি-ভিডিও থেকে নেওয়া)

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। নতুন এই জঙ্গি সদস্যরা কাশিমপুর কারাগারে একযোগে জঙ্গি হামলা চালিয়ে উগ্রপন্থিদের ছাড়িয়ে নেওয়ার ছক কষেছিল বলে জানা গেছে।

সোমবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হন নতুন জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান মাসুদ ওরফে রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ আবুল বাশার মৃধা। এর পর তাঁদের মোবাইল থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ভিডিও জব্দ করা হয়।

এই ভিডিওর বিষয়ে র‌্যাবের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ছোট ছোট এই ভিডিওগুলো তিন-চার মাস আগের তৈরি। বড় ধরনের হামলা করে অস্ত্রসহ এসব ভিডিও প্রকাশ করে ‘দায় স্বীকারের’ পরিকল্পনা ছিল তাদের। বিশেষ করে কাশিমপুর কারাগারে একযোগে জঙ্গি হামলা চালিয়ে উগ্রপন্থিদের ছাড়িয়ে নেওয়ার ছক কষেছিলেন তাঁরা। অস্ত্র প্রশিক্ষণের অধিকাংশ ভিডিও নতুন জঙ্গি সংগঠনের সামরিক প্রশিক্ষক রনবীরের ডিভাইস থেকে পাওয়া গেছে। ভিডিওতে ৩০-৩৫ জন তরুণকে দেখা গেছে। ঘরছাড়া তরুণদের যে নিখোঁজ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, তাঁদেরও ছবি সামরিক প্রশিক্ষণের ভিডিওতে রয়েছে। ভিডিওতে যাঁদের দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা গেছে। তাঁরা হলেন- সালেহ আহমেদ, নিজাম উদ্দিন ও আবুল বাশার মৃধা।

মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার রনবীর প্রথম জীবনে ছিলেন ‘ডাকাত’। কারাবন্দি অবস্থায় আরেক জঙ্গি সংগঠন জেএমবির শীর্ষনেতাদের সংস্পর্শে এসে তিনিও উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর বাড়ি সিলেটে। ২০০৭ সালের আগে ডাক বিভাগে চাকরি করতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করতেন। ডাকাতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়। ওই মামলায় ২০০৭-পরবর্তী সময়ে কয়েক দফায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন রনবীর। জামিনে বের হওয়ার পর জেএমবির জন্য কাজ শুরু করেন।

মূলত জেএমবির যেসব সদস্য কারাগারে আছেন, তাঁদের পরিবারের দেখভাল করতেন তিনি। কারাবন্দি জেএমবি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করতেন। জামাতুল আনসারের এখনকার বর্তমান শূরা সদস্য এবং অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান মোশাররফ হোসেন ওরফে রাকিবের সঙ্গে ২০১৭ সালে পরিচয় হয় রনবীরের। রাকিবের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে জামাতুল আনসারে যোগ দেন তিনি।

কমান্ডার মঈন আরও বলেন, রনবীর সিলেট অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন করতেন। শুরু থেকে সংগঠনের সামরিক শাখার বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে বড় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। সংগঠনের আমিরের নির্দেশনায় কুমিল্লার পদুয়ার বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শূরা কমিটির সভার আয়োজন করেন তিনি। ২০২১ সালে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল কেএনএফ বা বমপার্টির সঙ্গে জামাতুল আনসারের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে যে চুক্তি হয়, সেখানেও সংগঠনের আমির ও অন্যান্য শূরা সদস্যদের সঙ্গে রনবীর উপস্থিত ছিলেন।

কারাগারে গিয়ে সাধারণ অপরাধীদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর আরও ঘটনা শোনা যাচ্ছে। তা হলে কারাগার উগ্রবাদী দীক্ষার নিরাপদ জায়গা হয়ে উঠেছে কিনা- এমন প্রশ্নে কমান্ডার মঈন বলেন, বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা ও কারা কর্তৃপক্ষ, সবাইকে বলা হয়েছে। তারা কাজ করছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.