কালো এলাচির খোঁজ

0
1534
বগুড়ায় ধরেছে কালো এলাচির ফল। ছবি: লেখক

বৃষ্টির কালটা চলে গেলেও মাটি ভেজা। বর্ষাকালের মধ্যেই ফুটেছিল কালো এলাচির ফুলগুলো।

যেসব ফুল আগে ফুটেছিল, সেগুলো ফলে পরিণত হয়েছে। শ্রাবণ পেরিয়ে ভাদ্র এলেও কিছু গাছে তখনো একটি–দুটি ফুল ফুটছে। ফুলগুলোর রং সাদা, মধ্যখানে হলদে ছোপ, তার মধ্যে আবার লাল আভা। ফুল দেখতে অনেকটা অর্কিড ফুলের মতো। অর্কিডের মতো ছড়ায় ফোটে। কিন্তু অর্কিডের মতো শূন্যে ফুলওয়ালা ছড়া দোলে না, বরং ছড়া মাটিতে লুটায়। কেননা, মাটির কাছাকাছি গোড়া থেকে কালো এলাচিগাছের পুষ্পমঞ্জরি বা ফুলের ছড়া বের হয়। সেসব ছড়ায় ফুল ফোটা শেষ হলে থোকায় ফল মানে এলাচি ধরে। ডিম্বাকার সবুজাভ ঘোর বাদামি রঙের ফলগুলোর খোসা চকচকে মসৃণ। শুকিয়ে গেলে কালো রং ধারণ করে বলে এর নাম কালো এলাচি। বগুড়ার শিবগঞ্জে মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে খোঁজ পাওয়া গেল সেই কালো এলাচির। ইংরেজি নাম ব্ল্যাক কার্ডামম।

বগুড়া মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আশিকুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালে ভারত থেকে সংগ্রহ করে ফেব্রুয়ারি মাসে ইনস্টিটিউটের মাঠে গবেষণার উদ্দেশ্যে তিনটি লাইন লাগানো হয়। দু–তিন বছর ধরে সেসব গাছে এলাচি ধরছে। জুন-জুলাই মাসে ফুল ও ফল ধরে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফল পাকে। পাকা ফল পরে শুকিয়ে এলাচি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেসব এলাচির ঘ্রাণ আছে, তবে কম। কালো এলাচি আসলে এলাচির একটি বন্য জাত। পাহাড়ে ছড়া বা নালার পাশে ভেজা মাটিতে কালো এলাচি ভালো জন্মে। কালো এলাচিগাছের বেশি বৃদ্ধির জন্য দরকার আর্দ্র পরিবেশ।

কালো এলাচি একটি কন্দজাতীয় চিরসবুজ উদ্ভিদ। এ গাছের গড়ন অনেকটা আদাগাছের মতো হলেও গাছ আদাগাছের চেয়ে অনেক লম্বা হয়। কাঠির মতো কাণ্ড, পাতা হয় কা‌ণ্ডের ওপরের দিকে, ফুল ও ফল হয় কা‌ণ্ডের গোড়া থেকে। বয়স্ক কাণ্ড শুকিয়ে যায়, গোড়া থেকে নতুন গাছ বের হয়। গোড়ায় আদার মতো মোথা হয়। এই মোথা জন্ডিস রোগ সারাতে ব্যবহার করা হয়। কালো এলাচির উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Amomum subulatum ও পরিবার জিঞ্জিবারেসি। ভারত ও ভুটানের পর নেপাল কালো এলাচির বড় উৎপাদক।

মৃত্যুঞ্জয় রায়

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.