দেশের কারাগারগুলোতে শূন্য পদে এক মাসের মধ্যে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কারা কর্তৃপক্ষ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলীর চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
শুনানিতে কারা অধিদপ্তরের পক্ষে উপস্থিত আইনজীবীর উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, চিঠি চালাচালি থেকে বের হয়ে দ্রুত নিয়োগ দিন। কয়েক দফা সময় নিয়েও কারাগারে শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগ না দেওয়ায় হাইকোর্ট উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, এতদিনেও আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করতে পারলেন না। ক্ষমতা এবিউজ (অপব্যবহার) করার জন্য না, ক্ষমতা মানুষকে সেবার জন্য এটা মনে রাখবেন। কারাগারে তো গরীব মানুষ থাকে। ধনীরা কারাগারে গেলেও তাদের জন্য ডিভিশনের ব্যবস্থা থাকে। তাই কারাগারে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে গরীব মানুষকে বাঁচান।
এ সময় কারা অধিদপ্তরের আইনজীবী বলেন, ১৪১ পদের মধ্যে ১২৫ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমরা তাগাদা দিচ্ছি।
রিটের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন। কারা অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফিকুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৯ সালে কারা চিকিৎসক সংকট নিয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ওই প্রতিবেদনগুলো যুক্ত করে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন আইনজীবী মো. জে আর খান (রবিন)। এরপর ওই বছরের ২৩ জুন প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করা হয়। রুলে কারাগারে আইনগত অধিকার নিশ্চিতে মানসম্মত থাকার জায়গা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না এবং বন্দীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে কারা চিকিৎসকের শূন্য পদে নিয়োগ দিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল।
আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (সুরক্ষা বিভাগ), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও কারা মহাপরিদর্শককে এই রুলের জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া অপর এক আদেশে আদালত সারাদেশের সব কারাগারে বন্দীদের ধারণক্ষমতা, বন্দী ও চিকিৎসকের সংখ্যা এবং চিকিৎসকের শূন্য পদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৫ নভেম্বর রুলের শুনানিতে দেশের সব কারাগারে শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।