বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নানা কারণে কামরুল আহসান ওরফে রূপণ শেষ পর্যন্ত ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন। বিএনপির ভোটাররা তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। তাঁর প্রয়াত বাবার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়াসহ পারিবারিক ঐতিহ্য তাঁকে এমন সুবিধাজনক অবস্থানে আনতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বরিশালসহ দেশের পাঁচ সিটির নির্বাচনে এবার অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। কিন্তু ভোটের মাঠে তাদের আলাদা একটি গুরুত্ব আছে। কারণ, বিএনপির আলাদা ভোটব্যাংক এবং বিগত দিনে নগর ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ভোটের মাঠে দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততা। দলটি এবার সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়ায় বরিশালে চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন নেতা–কর্মীরা।
বিএনপির ভোট বর্জনের ঘোষণার পর নগরে ভোটারদের মধ্যে যে প্রশ্নটি এখন বেশি আলোচিত হচ্ছে, তা হলো, দলটির বিপুল ভোটার বিকল্প প্রার্থী হিসেবে কাকে সমর্থন দেবেন? বরিশালে এবার ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় পার্টি ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়েছেন কামরুল আহসান।
কামরুল আহসানের বাবা আহসান হাবিব কামাল গত বছর মারা যান। তিনি বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির মৎস্যজীবী–বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বরিশাল পৌরসভার মেয়র ছিলেন। ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরনের সঙ্গে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৭ হাজার ১০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন আহসান হাবিব কামাল। সেই হিসাবে কামরুল আহসানই বিএনপির ভোটারদের আনুকূল্য পাওয়ার আলোচনা ক্রমে জোরালো হচ্ছে।
বরিশালের বিএনপি নেতারা মনে করেন, ইসলামী আন্দোলন সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে নেই। আর জাপা সরকারি দলের সঙ্গে সহঅবস্থানে আছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির বিশাল ভোট ব্যাংকের শেষ বিকল্প কী—এটা ঘুরেফিরে আলোচিত হচ্ছে ভোটার ও সচেতন মহলে। বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যেও এ নিয়ে ভেতরে-ভেতরে আলোচনা আছে।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নিয়ে নানা জল্পনা
মহানগর বিএনপির অন্তত ছয়জন সাবেক ও বর্তমান নেতার সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ হয় । তাঁরাও এ ক্ষেত্রে অভিন্ন মত দিয়ে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এ ধরনের স্থানীয় নানা সমস্যা তৈরি হয়। নেতাদের কথা থেকে যেসব বিষয় উঠে আসে, তাতে একটি আভাস পাওয়া যায়। আর তা হলো, ইসলামী আন্দোলন ও জাপা প্রার্থী বিএনপির জন্য ভালো বিকল্প নয়। সে ক্ষেত্রে এবারের নির্বাচনে কামরুল আহসানই বিএনপির বিকল্প প্রার্থী হয়ে উঠতে পারেন।
রাজনীতি ও ভোটের মাঠ পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, কামরুল আহসান নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুরুতে খুব একটা আলোচনায় না থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারেন। কারণ, বিএনপির ভোট তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়া, তাঁর প্রয়াত বাবার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইতিহাস, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়াসহ পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে তিনি একটা শক্ত অবস্থানে চলে এলে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না।
বরিশাল মহানগর বিএনপির সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন কখনোই বিএনপির ভোটারদের কাছে বিকল্প হতে পারে না। আহসান হাবিবের ছেলে কামরুল আহসান পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। এটার একটা সহানুভূতি তিনি পেলেও পেতে পারেন। তবে দলগতভাবে এমনটা ভাবা হচ্ছে বলে আমার কাছে মনে হয় না।’
কামরুল আহসান একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তবে বর্তমানে দলে তাঁর কোনো পদ-পদবি নেই। বাবা মেয়র থাকলেও কামরুল নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। রাজনীতিতে সক্রিয় হননি। কিন্তু এমন অবস্থায় কামরুল আহসান হঠাৎ কেন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, এ নিয়ে কৌতূহল সর্বত্র।
এই কৌতূহলের বিষয়ে বরিশাল নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান বলেন, ‘বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। আমাদের দাবি, জাতীয় নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। সে ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনে কে প্রার্থী হলো, কে হলো না সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। দলগতভাবে এমন ভাবনাও আমাদের নেই।’
যোগাযোগ করা হলে কামরুল আহসান বলেন, ‘বিএনপিতে আমার পদপদবি নেই ঠিক। তবে আমরা আগাগোড়া বিএনপির রাজনীতি ও আদর্শের সঙ্গেই ছিলাম এবং এখনো আছি। বর্তমানে বিএনপি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভোট আশা করা যায় না।’
বিএনপির কারও কথা নয়, বরং নিজের তাগিদে প্রার্থী হয়েছেন জানিয়ে কামরুল আহসান বলেন, ‘সরকার চায় না তাঁদের প্রার্থীর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকুক। এ জন্য আমি নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পরই আমাকে দুদক সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে। আমি মনে করি, আমাকে ভয় দেখাতেই এটা করা হয়েছে।’