ক্রীড়া পরিবারে তাঁর বেড়ে ওঠা। বাবা গ্রেগ ম্যাকিনটোশ ও মা জিল হোর্সটেড তো কানাডার বিখ্যাত সাঁতারু। ১৯৮০ ও ১৯৮৪ অলিম্পিকে খেলেছিলেন হোর্সটেড। মায়ের অনুপ্রেরণায় সাঁতারকেই বেছে নেন সামার ম্যাকিনটোশ। ছোট বোন ব্রুক অবশ্য প্রেমে পড়েছেন স্কেটিংয়ের। দুই বোন ক্রীড়ার দুই মেরুতে। মা হোর্সটেড যেটা করতে পারেননি, কন্যা ম্যাকিনটোশ সেটাই করেছেন পুলের নীল জলে। সেটাও আবার মাত্র ১৭ বছর বয়সে।
প্যারিস অলিম্পিকে সোমবার মেয়েদের ৪০০ মিটার মিডলে ব্যক্তিগত ইভেন্টে ৪ মিনিট ২৭.৭১ সেকেন্ড সময় নিয়ে জিতেছেন স্বর্ণপদক। অলিম্পিকের মঞ্চে ক্যারিয়ারের প্রথম স্বর্ণ জয়ের পর পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে যখন দেশের জাতীয় সংগীতের সুরে সুর মেলান ম্যাকিনটোশ, তখন তাঁর মনে পড়ে যায় স্কুল জীবনের সেই সুখের স্মৃতি, ‘এখনও নিজেকে আমার সেই ১০ বছর বয়সী মেয়েটি মনে হচ্ছে। ছেলেবেলায় যে স্বপ্নগুলো দেখেছি, সেই পথ ধরেই ছুটে চলার চেষ্টা করছি আমি এবং যতদিন সম্ভব চাই এই খেলায় থাকতে। আমার মনে পড়ে, বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে প্রতিদিন ক্লাস শুরুর আগে জাতীয় সংগীত গাইতাম। এখন অলিম্পিকে এসে এখানে গলা মেলাতে পারাটা দারুণ।‘
বিশ্ব সাঁতারে ম্যাকিনটোশের আগমনী বার্তা শোনা গিয়েছিল তিন বছর আগে টোকিও অলিম্পিকে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে কানাডার সাঁতারু দলের সঙ্গে অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। টরন্টো থেকে উঠে আসা এই সাঁতারু অল্পের জন্য পদক গলায় পরতে পারেননি। ৪০০ মিটার ফ্রি-স্টাইলে হয়েছিলেন চতুর্থ। প্যারিস অলিম্পিকে এই ইভেন্টেই কেটি লেডেকিকে পেছনে ফেলে রুপা জিতেই চমকে দিয়েছিলেন ম্যাকিনটোশ। দারুণ কিছুর পূর্বাভাস দিয়ে ১৭ বছরেই তাঁর মুখে সোনার হাসি। ২০২১ সালে টোকিও অলিম্পিকের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সময়ের সঙ্গে নিজেকে আরও পরিণত এবং পরিপক্ব করে তোলেন তিনি। এই ইভেন্টে বিশ্বরেকর্ডও গড়েছিলেন ম্যাকিনটোশ। অতীতকে পেছনে ফেলে কানাডিয়ান এই কিশোরী স্বপ্নপূরণের উচ্ছ্বাসে ভাসছেন। যে পদকটি গলায় পরেছেন, সেই স্বর্ণ জয়ের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলেন ম্যাকিনটোশ, ‘অনুভূতি? আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা (স্বর্ণজয়) অবাস্তব। সোনার পদক জিতে এই পোডিয়ামে দাঁড়ানো আমার স্বপ্ন ছিল। সেটি পূরণ করতে পেরে খুবই খুশি।’ এর পরই নিজেকে কীভাবে তৈরি করেছেন সেই গল্প শোনালেন তিনি, ‘যতবারই বিশ্বমঞ্চে খেলি, কীভাবে পরিস্থিতি সামলাতে হবে, সেটা সম্পর্কে আরও বেশি করে শিখি। সেটা মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে ও আবেগের জায়গা থেকে। খুব বেশি উত্তেজিত হই না, ভেঙেও পড়ি না। নিজের ফলের ওপর নির্ভর করি।’