কানাডাকে গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

0
141
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাসটিন ট্রুডো

ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে ভ্যাঙ্কুভারে গুলি করে হত্যার পর কানাডাকে গেয়েন্দা তথ্য দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের দেওয়া এই তথ্যের কারণেই ভারত ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে সিদ্ধান্তে আসতে সক্ষম হয় অটোয়া। এছাড়া, কানাডার কর্মকর্তারাও তদন্তে দেশটিতে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিকরা এই হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত বলে তথ্য পেয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের এই তথ্য সরবরাহ নিয়ে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কানাডা-ভারতের কূটনৈতিক এই বিরোধে খুব একটা এগোবে না যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, চীনকে মোকাবিলায় নয়াদিল্লিকে পাশে রাখতে চায় ওয়াশিংটন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ভারতকে কানাডার তদন্তে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধ এড়াতে চান। এই ঘটনায় মার্কিন গোয়েন্দাদের তথ্য সরবরাহের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় ওয়াশিংটনের সেই প্রত্যাশা ভেস্তে যেতে পারে।

গত ১৮ জুন ভ্যাঙ্কুভার এলাকায় দুই ব্যক্তি কানাডার নাগরিক নিজ্জারকে গুলি করে হত্যা করে। তিনি ভারতের শিখ সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল খালিস্তানের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন।  হত্যাকাণ্ডের আগে কানাডার কর্মকর্তারা নিজ্জারকে সতর্ক করেছিলেন জীবনের হুমকির বিষয়ে। তাঁর বেশ কয়েকজন বন্ধু ও সহযোগী জানিয়েছেন, প্রাণনাশের হুমকির ব্যাপারে নিজ্জারকে একাধিকবার তারাও সতর্ক করেছিলেন। সেই সঙ্গে তাঁকে মন্দিরে আসা-যাওয়া ত্যাগ করতেও বলা হয়েছিল।

নিজ্জার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আগে নিজ গোয়েন্দাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য ছিল না বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তথ্য পেলে তারা দায়িত্বের জায়গা থেকেই কানাডাকে জানাত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক কর্মকর্তা বলেছেন, কানাডার কর্মকর্তারা নিজ্জারকে সাধারণভাবে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তিনি ভারতীয় সরকারের একটি চক্রান্তের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে– সেটি তাঁকে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়নি।

নিয়মিত ও স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কানাডাসহ নিকটতম গোয়েন্দা অংশীদারদের সঙ্গে অনেক তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। সহযোগী কর্মকর্তারা বলেছেন, নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য ছিল না। এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মার্কিন কর্মকর্তারাও এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করতে নারাজ। তবে ঘনিষ্ঠ মিত্র কানাডাকে সাহায্য করতে চায় ওয়াশিংটন। সেই সঙ্গে ভারতকেও বিচ্ছিন্ন করতে চায় না।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং দেশটির কর্মকর্তারা ভারত সম্পর্কে সংগ্রহ করা গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করতে নারাজ। মার্কিন কর্মকর্তারাও তাদের সবররাহ করা গোয়েন্দা তথ্য দিতে চাননি। তবে কানাডা সরকার একাধিক দেশ থেকে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির এক সরকারি কর্মকর্তা। এদিকে, কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (সিবিসি) জানিয়েছে, কানাডায় ভারতীয় কূটনীতিকদের যোগাযোগ ও কথোপকথন সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের আধিপত্য রোধকে প্রাধান্য দিয়ে বাইডেন প্রশাসন হয়তো কানাডা এবং ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করবে। রাজনৈতিক কৌশল সংস্থা সিগনাম গ্লোবাল অ্যাডভাইজারসের প্রতিষ্ঠাতা চার্লস মায়ার্স বলেছেন, ওয়াশিংটন এই দ্বন্দ্বে খুব বেশি জড়িত হবে বলে তিনি মনে করেন না।

এদিকে, কানাডায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড কোহেন বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পাঁচ দেশের গোয়েন্দা জোট ‘ফাইভ আইস’ তথ্য সরবরাহ করেছে। এর ফলেই কাডানার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ভারতের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ শক্তভাবে উপস্থান করতে পেরেছেন।

হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত থাকার ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ রয়েছে, এমন অভিযোগ থাকলেও ট্রুডো বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন। গত সপ্তাহে জাতিসংঘে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তিনি বলেন, ‘আমরা উস্কানি দিতে বা সমস্যা সৃষ্টি করতে চাই না। নিয়মতান্ত্রিক ফয়সালা চাই। তবে তিনি নিজ্জার হত্যায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে বদ্ধপরিকর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.