কাঁচা মরিচের দাম আরও বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে গতকাল শনিবার প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এমনকি বিভিন্ন উৎপাদন এলাকাতেও উচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে মরিচ।
মরিচচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছর মরিচ আবাদের শুরুর দিকে অর্থাৎ এপ্রিল, মে ও জুন মাসে প্রচণ্ড খরা ও গরমে মরিচগাছগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ফলন কমেছে। অন্যদিকে বর্তমানে ভারী বর্ষণের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাঁচা পণ্যের সরবরাহ কমেছে। এ ছাড়া ভারত থেকে যে কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে, তার দামও বেশি। এসব কারণে বাজারে মরিচের দাম ক্রমে বাড়ছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে আমদানি করা ভারতীয় কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৪০০ টাকা কেজি। আর দেশি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৬০ টাকা। অবশ্য পাড়া-মহল্লায় এর চেয়ে বেশি দামেও কাঁচা মরিচ বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারতীয় কাঁচা মরিচ আকারে দেশি মরিচের তুলনায় কিছুটা বড়।
ঢাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, মরিচের উৎপাদনস্থলেই দাম বেশি। যেমন দেশের কাঁচা মরিচের অন্যতম উৎপাদন এলাকা বলে পরিচিত পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার বিভিন্ন খুচরা বাজারে গতকাল ৩৬০ টাকা কেজি স্থানীয় (দেশি) কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে। স্থানীয় পাইকারি বাজারে কৃষকেরা এই মরিচ বিক্রি করেছেন ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। আবার দিনাজপুরের বিরামপুরের বাজারে গতকাল দেশি জাতের কাঁচা মরিচ ২০০ ও হাইব্রিড জাতের কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
কৃষকেরা বলছেন, গত বছরের মতো এবারও প্রচণ্ড খরা ও গরমের কারণে মরিচের ফলন কম হয়েছে। ফলে বাজারে মরিচ আসছে খুব কম। তাই দাম বাড়তে শুরু করেছে। তাঁদের ভাষ্য, বাজারে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি মরিচ বিক্রি করেও তাঁদের লোকসান হচ্ছে। সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, তবে মৌসুমের শেষ সময় বলে আগের তুলনায় এখন ফলন কম পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে নিয়মিত কাঁচা মরিচ আমদানি হলেও দেশের বাজারে দাম কমছে না। হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, ১ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ৮৬টি ট্রাকে করে ৮১৮ টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। তবে আমদানি হলেও ভারতীয় মরিচের দামই এখন সবচেয়ে বেশি।
চলতি বছর কোরবানি ঈদের মাসখানেক আগে থেকেই মরিচের দাম বাড়তে শুরু করে। মাঝখানে দাম কিছুটা কমলেও প্রায় ১৫ দিন ধরে দাম বাড়ছেই। গত বছরও কোরবানির সময়ে ঢাকায় কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছিল। ওই সময় কাঁচা মরিচের কেজি ৭০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তখন দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়।
সবজি ও কাঁচা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক কারণকে দায়ী করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম। গতকাল রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভারী বর্ষণের কারণে দেশের ১৮টি জেলায় পানি বেড়েছে। এতে ওই এলাকাগুলো থেকে কাঁচা পণ্যের সরবরাহ কমেছে। ফলে পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু কারও ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে হয় না। আমি মনে করি এ পরিস্থিতি সাময়িক। তবে বাজারে আমাদের নজরদারি থাকবে। কারসাজির কোনো অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যদিও মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, ভোজ্যতেল, চিনি, আটাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম অনেক দিন ধরেই চড়া। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৩০ টাকা, আর আলুর কেজি ৬০-৬৫ টাকা। বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমলেও দেশে সেভাবে কমছে না। মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে একদিকে পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে আমদানি পণ্যের ওপর করভারও বেড়ে যাচ্ছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ছে, চাপে পড়ছে মানুষ।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপের কথা বললেও বাজারে তার প্রভাব তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি থাকছে ১০ শতাংশেই কাছাকাছিই। এর মধ্যে কাঁচা মরিচের দাম ৩৫০-৪০০ টাকা হয়ে সংসারের খরচ আরও বাড়িয়েছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি চাকরিজীবী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘কাঁচা মরিচ কেনা না হয় আপাতত বাদ দিলাম, ডিমের বিকল্প কী? সবকিছুর দামই তো চড়া! স্বল্প আয়ের মানুষ খুব সংকটে আছে।’
ঢাকা