কোনো গোষ্ঠীকে আইনের বাইরে রাখা সমীচীন নয়

0
98
জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আলোচনা সভা

সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বাইরে রাখার জন্য সাংবাদিক সমাজের কারও কারও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর জন্য এমন নিয়ম থাকা উচিত নয়। বিদ্যমান একটি আইনে সরকারি কর্মচারীদের জন্য এ ধরনের নিয়ম আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সেটাও থাকা উচিত নয়। এ সময় তিনি নিজেও ডিজিটাল হয়রানির শিকার হন বলে জানিয়েছেন।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মত প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী। জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেছেন ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন দৈনিক সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্মসম্পাদক আইয়ুব ভূইয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটির সদস্য জুলহাস কবীর।

ড. হাছান তাঁর বক্তব্যে বলেন, কোনো একটি গোষ্ঠীকে আইন থেকে বাদ দেওয়া আমি মনে করি সমীচীন নয়। এ সময় উদাহরণ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বলছি, কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে (কর্তৃপক্ষের) অনুমোদন নিতে হবে, আমি ব্যক্তিগতভাবে এটার বিরুদ্ধে। এ ধরনের একটি আইন মনে হয় করা হয়েছে (সরকারি চাকরি আইন-২০১৮)। আমি ব্যক্তি হাছান মাহমুদ হিসেবে বলতে চাই, একজন নাগরিক হিসেবে বলতে চাই, আমি এটার বিরুদ্ধে। সুতরাং কোনো একটি গোষ্ঠীকে আইন থেকে বাদ দেওয়া উচিত নয়, একইসঙ্গে কোনো একটি গোষ্ঠীর উপর যাতে কোনো আইনের অপপ্রয়োগ না হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। শুধু তাই নয়, কোনো নাগরিকের উপরেই যাতে আইনের অপপ্রয়োগ না হয় তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

তিনি নিজেও ডিজিটাল হয়রানির শিকার হন বলে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অনলাইনে ডিজিটাল হয়রানির শিকার আমি হয়েছি। এমন অনেক ঘটনা আমার রাজনৈতিক জীবনে ঘটেছে। যা আমি করিনি কিন্তু সেটা প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু আমি তো তথ্যমন্ত্রী, আমি ডিজিটাল আইনের আশ্রয় নিতে পারিনি, নিইনি। আপনারা অনেকেই হয়তো (হয়রানির) শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ হয়ত আইনের আশ্রয় নিয়েছেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ আগের তুলনায় অনেক কমেছে উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, তবে এ আইনের অপপ্রয়োগ শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা প্রয়োজন মনে করি। যুক্তরাজ্যে প্রতি মাসে ডজনের বেশি মানুষ ডিজিটাল অপরাধ সংক্রান্ত কারণে গ্রেপ্তার হয়। তাদের জনসংখ্যা আমাদের তিনভাগের এক ভাগ, ৬ কোটির কিছু বেশি। বাংলাদেশে একজন গ্রেপ্তার হলে সেটাই পত্রিকার শিরোনাম হয়। অবশ্যই এ আইনের অপপ্রয়োগ হওয়া উচিত নয়, কোনো আইনেরই অপপ্রয়োগ হওয়া উচিত নয়।

সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য। এখন দেশ স্বাধীন হওয়ার পঞ্চাশ বছর পরও সেইসব বিষয় নিয়ে দাবি জানাতে হবে এমনটা ভাবিনি। তিনি আরও বলেন, নতুন পরিস্থিতিতে সংবাদ মাধ্যমকে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধভাবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে ভালো সাংবাদিকতার মাধ্যমেই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। মালিক পক্ষ বা সরকার পক্ষ, যাদের কথাই বলেন, সব বাধা কেবল ভালো সাংবাদিকতা দিয়েই উতরানো সম্ভব।

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে, এটা বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে ডিজিটাল অপরাধ প্রতিরোধে ডিজিটাল আইনের প্রয়োজনও আছে। আইনটির যে অপপ্রয়োগ হচ্ছে সেটা সরকারের অনেক মন্ত্রীও স্বীকার করেছেন। তারা আশ্বাসও দিয়েছেন আইন সংশোধনের। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা বাস্তবায়ন হয়নি।

দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, পরাধীন মানুষ কখনও স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে না। শুধু কালো আইন বাতিল হলেই মুক্ত স্বাধীন সাংবাদিকতা সম্ভব হবে আমি মনে করি না। আমরা সাংবাদিকরা আজ মালিক, সম্পাদক, নেতা, দলীয়করণে বিভক্ত। আমদের বিভক্তিই গণমাধ্যমের দুর্বলতার অন্যতম কারণ। নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারলেই অনেক সমস্যা সমাধান সম্ভব। কিন্তু মনে হয় না ঐক্যবদ্ধ হওয়া সম্ভব। আজকের এই বিশেষ দিনটিতে বলতে চাই, কালো আইন বাতিলে আর কোনো আশ্বাস নয়, আশ্বাসের বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

সভাপতির বক্তব্যে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতা থেকে সাংবাদিকদের বাইরে রাখা প্রয়োজন। এই আইনটির কারণে বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সাংবাদিকদেরও নিজেদের প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এখন অনেকে একটি মোবাইল, আর একটি ডোমেইন কিনে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেয়। এসব বিষয়েও আমাদের যথাযথ বিধি-বিধান প্রণয়ন ও প্রতিপালনে মনযোগ দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বৃহৎ পুঁজি ছাড়া পেশাদার গণমাধ্যম পরিচালনা প্রায় অসম্ভব। তাই যাদের অঢেল টাকা আছে তাদের হাতে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান চলে যাচ্ছে। এসব কাদের হাতে যাচ্ছে, তারা কারা, এসব বিষয়ও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।

অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাব, সম্পাদক পরিষদ, সম্পদক ফোরাম, বিএফইউজে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের বর্তমান এবং সাবেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.