বাংলাদেশের বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। শুক্রবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদরদপ্তর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে দিনটি উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে ছিল নানা অনুষ্ঠান।
বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মিলিয়ে ৬০ জনের একটি প্রতিনিধি দল। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশের বীরপ্রতীক ও ভারতের পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির। এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এদিন সকালে ফোর্ট উইলিয়ামের মূল ফটকের কাছে অবস্থিত বিজয় স্মারকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় ভারতের তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে।
এছাড়াও ফোর্ট উইলিয়ামের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রশিদ, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল (আইপিএস), ভারতের সাবেক বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল (অব.) অরূপ রাহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির প্রমুখ।
সবশেষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর.পি কলিতা।
এরপর সেনাবাহিনীর মাঠে আয়োজিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্বলিত একটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলটি। সেদিনের সেই স্মৃতিবিজড়িত দৃশ্য দেখে অনেকেই আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন।
পরে মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর.পি কলিতা বলেন, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতই প্রথম বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ভারত এবং বাংলাদেশ এই দুই রাষ্ট্র কেবল এক ইতিহাস ও সংস্কৃতি ভাগাভাগি করে না, উভয় রাষ্ট্রই এক চমকপ্রদ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে আজকের এই মহান বিজয় দিবস আরও মহৎ করে তুলেছে।
অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, আমি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে একাত্তরে যুদ্ধ করেছি। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসার সময় বেশ কিছু তথ্য নিয়ে এসেছি, এ ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছি। যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের আত্মত্যাগ দেখেছি, রক্তের স্রোত দেখেছি। আমি দীর্ঘদিন ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়েছি তাই ধীরে ধীরে দেখছি যে ভারতীয় সেনাবাহিনী খুবই দক্ষ বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। সময়ের প্রয়োজনে তারা নিজেদেরকে আরও বলিয়ান করছে। পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে মিশে থেকে তাদের কল্যাণেও অনেক কাজ করছে। এটা খুবই প্রশংসার দাবি রাখে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর আথিয়তায় মুগ্ধ এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে শ্রদ্ধা সেটা আমরা সঠিকভাবে উপভোগ করি।
এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন হচ্ছে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে। এই উপলক্ষে সেখানে দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস। এছাড়া হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ‘মুজিব চিরঞ্জীবী’ মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।