ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিলেন আজমত উল্লা

0
81
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছেন আজমত উল্লা খান

‘জনতার মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। এতে তিনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সিটিজেন চার্টার বা নাগরিক সনদ ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া সিটি করপোরেশনের প্রতিটি বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। ‘জনতার মুখোমুখি’ অনুষ্ঠান আয়োজন করে মহানগর ও ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, নগরের উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে পরামর্শক কমিটি বা নগর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি গঠন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের পরামর্শ ও সুপারিশের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় গাজীপুরে প্রকৌশলী ভবনে তিনি ইশতেহার ঘোষণা করেন। তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের অনিয়ম ও দুর্নীতি দূর করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চান। সিটি করপোরেশনকে উন্নয়নের মডেল বানাতে চান তিনি। ইশতেহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, ব্রিজসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি সেবামূলক খাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করে সেবার মান নিশ্চিত করতে এক বছর, দুই বছর ও পাঁচ বছর মেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। মহানগরের বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সামাজিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ শিশুদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, ভবঘুরে ভিখারিদের পুনর্বাসন, সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী যুবক-যুব মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ, সংস্কার ও উন্নয়নসহ নতুন পার্ক নির্মাণ, শিশুদের জন্য বিশেষায়িত পার্ক নির্মাণ এবং নদী সংলগ্ন স্থানকে নান্দনিক, পায়ে হাঁটা ও বিনোদন উপযোগী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সিটি মাস্টারপ্ল্যান এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত একটি সমৃদ্ধ নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দেন ইশতেহারে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে যাত্রা শুরু করেছেন তার সঙ্গে সংগতি রেখে আধুনিক মহানগর ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি কাজ করবেন বলে জানান।

সেবার মান বাড়াতে অভিজ্ঞ নগরবিদ ও প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে বিশ্বমানের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান। হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স, নাগরিক সনদসহ বিভিন্ন সনদের ফি, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি অনলাইনের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা, ওয়ার্ডগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা ও ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন করার উদ্যোগ গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন ইশতেহারে।

নাগরিকদের হোল্ডিং ট্যাক্সের হার না বাড়িয়ে রিভিউ বোর্ডের মাধ্যমে সহনশীল পর্যায়ে চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে ইশতেহারে। এছাড়া সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বরাদ্দ অর্থ যথাযথভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের ঘোষণা দেন। নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ, স্বল্পমূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সেবা প্রদানের উদ্যোগ, দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের মৃত্যুর পর প্রয়োজন অনুযায়ী কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে শ্রমিক, বস্তিবাসী ও দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ইশতেহারে।

নগরের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি সেবাদানকারী স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে সব নাগরিকদের সুপেয় পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত, নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য ‘জিআইএস’ পদ্ধতি অবলম্বন করে সার্ভের মাধ্যমে ড্রেন ও খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে উপযোগী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান।

প্রতিবন্ধী নাগরিক এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণের আশ্বাস দেন। গুরুত্ব বিবেচনায় সড়ক উন্নয়ন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্টজনদের নামে রাস্তার নামকরণ ও নির্মাণকাজের গুণগতমান নিরীক্ষার জন্য শক্তিশালী মনিটরিং টিম গঠনের কথা বলেন ইশতেহারে।

নগরের যানজট নিরসন, পার্কিং, ফুটপাতসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক, পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাথ নেটওয়ার্ক, যানজট নিরসনের জন্য বিআরটিএ, ট্র্যাফিক পুলিশ ও পরিবহন মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণ, নতুন ফুটওভার ব্রিজ, আধুনিক বাসস্ট্যান্ড ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ এবং রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাগরিকদের রেলে যাতায়াত সহজ করতে উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ের উপর ফ্লাইওভার নির্মাণসহ গাজীপুরে সংযোগ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে বলে জানান ইশতেহারে।

তিনি জানান, শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনে জিসিসি’র অধীনে কারিগরি ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে। নগরীতে অবস্থিত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও এতিমখানায় সাহায্য দেওয়া হবে। এছাড়া অনাথ, গরিব, যোগ্যতাসম্পন্ন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থার কথা বলেন। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব পাঠাগার আধুনিকীকরণ, নতুন পাঠাগার প্রতিষ্ঠা এবং ব্যক্তি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত পাঠাগারগুলোকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।

পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকার সংরক্ষণ ও নির্যাতন প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিংয়ের আশ্বাস দেন। শ্রমজীবী মায়ের শিশুদের পরিচর্যার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘ডে-কেয়ার’ সেন্টার স্থাপন এবং বিকেল ৫টার পর তারা যেন টিসিবি’র সরবরাহ করা খাদ্যসামগ্রী পেতে পারেন সেই উদ্যোগসহ সরকার ও মালিক পক্ষের সহযোগিতায় বেতন-ভাতা, নিরাপত্তা, বাসস্থান ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার করেন। গাজীপুর মহানগরীর সকল বস্তিবাসীর প্রাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত, শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ী সমাজের ভোগান্তি কমাতে জিসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে হেল্প-ডেক্স স্থাপনের কথা জানান।

এছাড়া তরুণদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি, বয়স্ক ও শিশুদের মিলনস্থল ও বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে ‘ওয়ার্ড সেন্টার’ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেন ইশতেহারে। সেগুলোতে কমিউনিটি সেন্টার, সেবাদান কেন্দ্র, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, শিল্পকলা, শিক্ষাকেন্দ্র, পাঠাগার প্রতিষ্ঠাসহ বহুমুখী ব্যবহার উপযোগীর আশ্বাস দেন। এছাড়া ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার তৈরির মাধ্যমে নাগরিক সেবা ও নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং স্মার্ট নেইবারহুড কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে বলে জানান।

নতুন অডিটোরিয়াম ও কালচারাল কমপ্লেক্সগুলো সংস্কার, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সহযোগিতার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে শিল্পকলায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং নাট্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইশতেহারে।

ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার জন্য উপযুক্ত মাঠ তৈরি, মেয়র গোল্ডকাপ ফুটবল ও ক্রিকেট প্রতিযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ এবং কারাতে, সাঁতারসহ বিভিন্ন খেলার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ, গাজীপুরে অবস্থিত প্রেসক্লাবের উন্নয়ন ও সংবাদকর্মীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেন হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন ইশতেহারে।

প্রতিটি ওয়ার্ডে ঈদগাহ ও কবরস্থান নির্মাণ, শ্মশানগুলোর উন্নয়ন ও নির্মাণ, নগরীর উপযুক্ত স্থানে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য সমাধিক্ষেত্র তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ, আলেম-মাশায়েখসহ সব ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, গির্জায় সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানান ইশতেহারে।

এছাড়া নগরীর জলাশয় দখলমুক্ত, নদী ও পরিবেশ রক্ষা, মশক নিধনে পরিবেশ অধিদপ্তর, সংশ্লিষ্ট শিল্প-কলকারখানা, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও স্থানীয় অধিবাসীদের সহযোগিতায় নদী ও জলাশয়কে দখলমুক্ত, দূষণমুক্ত ও সংস্কারের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ এবং নগরীর উপযুক্ত স্থানে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার কথা তুলে ধরেছেন ইশতেহারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.