কম দামে গরুর মাংস বেচে ভাইরাল ‘কালু কসাই’কে অনুসরণ করছেন অন্যরাও

0
166
বাজারদরের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে মাংস বিক্রি করে সাড়া ফেলেছেন নজরুল ইসলাম। সম্প্রতি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কদমতলী তিনমাথা মোড়ে

৫৮০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করে সাড়া ফেলে দেওয়া নজরুল ইসলামের (৬০) কল্যাণে বদলে যেতে শুরু করেছে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মাংসের বাজার। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের অনেক ব্যবসায়ী এখন তাঁর মতো মাইকিং করে বাজারদরের চেয়ে কমে প্রতি কেজি মাংস ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

প্রায় এক বছর ধরে কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করে আলোচনায় আসেন নজরুল ইসলাম। এলাকায় তিনি পরিচিত ‘কালু কসাই’ নামে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন তিনি। তাঁর বাড়ি গাবতলীর নশিপুর গ্রামে।

ঈদে বগুড়া শহরে মাংসের দাম একলাফে প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হলেও গাবতলী উপজেলায় বাড়েনি। ক্রেতারা বলছেন, কালু কসাই বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে গরুর মাংস বিক্রি করায় অন্যরাও কেজিতে ১৫০ টাকা কম দামে মাংস বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। উল্টো ক্রেতাদের কদর বেড়েছে।

বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে কদমতলী তিনমাথা সিএনজিস্ট্যান্ড মোড়ে নজরুল ইসলামের দোকান। বগুড়া শহরের চেয়ে দামে কম পেয়ে মাংস কেনার জন্য প্রতিদিন তাঁর দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। গাবতলী, ধুনট, এমনকি পাশের সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা থেকেও নজরুলের দোকানে মাংস কিনতে আসেন ক্রেতারা। প্রতিদিন ৫ থেকে ১০টি গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করেন নজরুল ইসলাম। শুক্রবার ছুটির দিনে ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকে। এদিন ক্রেতা সামাল দিতে গড়ে ১০টি গরু জবাই করতে হয়।

কালু কসাইয়ের ছোট ভাই আবদুস সালাম বলেন, ঈদের এক দিন আগে এবং ঈদের দিন মিলিয়ে ৪০টি গরু জবাই হয়েছে। দুই থেকে তিন লাখ টাকার গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৫৮০ টাকা কেজি দরে।

গাবতলীর নিজগ্রামের কলেজশিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, কালু কসাই সস্তায় মাংস বিক্রি করায় গাবতলী উপজেলাজুড়ে মাংসের বাজার পড়ে গেছে। কালু কসাইয়ের দেখাদেখি অন্যরাও মাইকিং করে ৬০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছেন। কালু কসাইয়ের এ মডেল ব্যবহার করে অন্য এলাকাতেও মাংসের দাম কমানো সম্ভব হয়েছে।

রফিকুল ইসলামের কথার সূত্র ধরে উপজেলার পেরীরহাট, সুবোধবাজার, তরণীরহাট, গোলাবাড়িবাজার, লেকুরহাট, মহিষাবানহাট, লাঠিগঞ্জসহ বিভিন্ন হাট ও বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, গরুর মাংসের দাম কমেছে।

পেরীরহাটের মাংস ব্যবসায়ী মানিক মিয়া বলেন, কদমতলীবাজারে কালু কসাইয়ের দোকানে সস্তায় মাংস পেয়ে ক্রেতারা সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। মাসখানেক হাত গুটিয়ে বসে থাকার পর ৬০০ টাকা কেজি দরে মাইকিং করে মাংস বিক্রি করছেন। ঈদের দুই দিনে ১৫টি গরু জবাই হয়েছে। দুই থেকে তিন লাখ টাকার গরু রয়েছে। কম দামে মাংস বিক্রি করেও প্রতিটি গরুতে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।
একই কথা জানান লেকুরহাটের মাংস ব্যবসায়ী রহেদ আলী। তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসাপাতি টিকিয়ে রাখতে আমরাও ৬০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’

মহিষাবানহাটের মাংস ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, কালু কসাইয়ের কারণে গোটা গাবতলী উপজেলায় মাংসের বাজার পড়ে গেছে। বাজারদরের চেয়ে গড়ে ১৫০ টাকা কম দামে মাংস বিক্রি হচ্ছে। লাভ কমেছে বিক্রেতাদের, কদর বেড়েছে ক্রেতাদের।

দুই যুগ ধরে মাংস বিক্রির ব্যবসায় যুক্ত নজরুল ইসলাম। আগে বাগবাড়িবাজারে মাংসের দোকান ছিল তাঁর। নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর বাগবাড়িবাজার থেকে ব্যবসা গুটিয়ে কদমতলী তিনমাথা মোড়ে এসে দোকান দেন। এখানে প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাতটি গরুর মাংস বিক্রি হয়। শুক্রবার ক্রেতার ভিড় বেশি থাকে। প্রথম দিকে এলাকার ক্রেতারাই এখানে মাংস কিনতেন। এখন বেশির ভাগ ক্রেতা আসেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। তিনি তরণীরহাট, মহাস্থানহাট, সোনাতলা কলেজহাট, ডাকুমারাহাটসহ বিভিন্ন হাট থেকে বেছে বেছে গরু কেনেন। মাংস বিক্রির জন্য দোকানে পাঁচজন সহকারী আছেন। পড়াশোনার ফাঁকে দোকানে বসেন বড় ছেলে হোসাইন আল মাহমুদ।

বাজারদরের চেয়ে কম দামে মাংস বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে হোসাইন আল মাহমুদ বলেন, ৭৫০ টাকা কেজি দাম দিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে মাংস খাওয়া সম্ভব নয়। তাই নিম্ন আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে কম দামে গরুর মাংস বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.