কমেছে সবজির দাম, উধাও বোতলজাত সয়াবিন তেল

0
13
সবজি ও সয়াবিন তেল
রান্নার তেল নেই। বাজারে এসে বেশ কয়েকটি সুপার শপ ও মুদি দোকানে গেলাম। কোথাও নেই দুই লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল। অবশেষে গলির একটি ছোট দোকানে পেলাম। দুটি ছিল, সেখান থেকে একটি নিলাম। তবে কিনতে হয়েছে বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে ১৫ টাকা বেশিতে।
 
কথাগুলো বলছিলেন মোহাম্মদপুরের গৃহিণী সাবিহা সুলতানা।
 
হতাশা মেশানো কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, সংকটের অজুহাতে প্রায়ই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের। সরকারের কাছে সবিনয় অনুরোধ, বিষয়টা একটু তদারকি করেন। তাহলে মানুষের দুর্দশা লাঘব হবে।
 
একই কথা তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান মাহমুদের মুখেও।
 
তিনি বলেন, সকালে রান্না শেষে যাওয়ার সময় মেসের খালা জানালেন তেল শেষ। দুপুরে তেল ছাড়া রান্না হবে না। কিন্তু বাজারে এসে পড়েছি বিপাকে। যেখানেই যাই, তেল নাই। থাকলেও সংকটের অজুহাতে দোকানিরা ১৫-২০ টাকা বেশি চাচ্ছেন। এখন না নিয়েও তো উপায় নেই। বাধ্য হয়ে বেশি দামে তেল কিনেছি।
 
ইমরান আরও বলেন, এভাবে যদি প্রায়ই বাজারে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ে, তাহলে আমরা যারা মেসে থেকে পড়ালেখা করি তারা যাবে কোথায়? সবারই তো কমবেশি আর্থিক সমস্যা আছে। চাইলেই তো আর বাড়ি থেকে যখন তখন টাকা আনতে পারি না। সরকারের উচিত বিষয়টির প্রতি সুনজর দেওয়া।
 
ফার্মগেটের রিকশাচালক মনু মিয়া বলেন, জিনিসপত্রের দাম হুটহাট বাড়লেও আমাদের আয় বাড়ে না। এর মধ্যে তেল পাওয়া যাচ্ছে না, দু-এক জায়গায় পাওয়া গেলেও দাম বেশি। এখন আমাদের মতো গরিব মানুষরা কী করবে বলেন?
 
মোহাম্মদপুর, তেজতুরি বাজার, ফার্মগেটের মতো রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও একই চিত্র। বোতলজাত সয়াবিন তেল এক প্রকার উধাও। আর দু-এক দোকানে পাওয়া গেলেও সেগুলো গায়ে লেখা দামের চেয়ে বেশি দামতে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
 
এই সুযোগে বেড়ে গেছে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম। দোকানিরা বাড়তি দর পেতে বোতল থেকে ঢেলে খোলা সয়াবিন হিসেবে তা বিক্রি করছেন, এমন অভিযোগও মিলছে অহরহ।
 
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে এক লিটার খোলা সয়াবিন ১৬৫-১৬৮ টাকা এবং এক লিটার খোলা পাম তেল ১৫৮-১৫৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
 
এ বিষয়ে একাধিক বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, বাজারে সয়াবিনের এক, দুই ও পাঁচ লিটারের বোতলের সরবরাহ একেবারেই নেই বললেই চলে। পরিবেশকদের কাছে বারবার তাগাদা দিয়েও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু দু-তিনটি কোম্পানি বোতলজাত সয়াবিন বাজারে ছাড়ছে, যা চাহিদার তুলনায় সামান্য। এ কারণেই দাম বেশি।
 
এগুলো ব্যবসায়ীদের খোঁড়া যুক্তি উল্লেখ করে ভোক্তা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে যে তেল বিক্রি হচ্ছে, তা আমদানি হয়েছে তিন থেকে চার মাস আগে। তখন বিশ্ববাজারে দর কম ছিল। এখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও সে তেল আমদানি করে পরিশোধনের পর বাজারে আসতে লাগবে অন্তত দুই মাস। তাই বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাত ও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দেশে দাম বাড়ানোর যে পাঁয়তারা চলছে, তা অযৌক্তিক।
 
এ বিষয়ে কথা হয় ভোক্তার নির্বাহী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান সজলের সঙ্গে।
 
তিনি বলেন, মূল্য সংযোজন কর কমানোসহ নানা সুবিধা দেওয়ার পরও ভোজ্যতেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো তেলের দাম না কমিয়ে উল্টো সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এখনই যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এবারের রমজানে পরিস্থিতি আরও অস্বস্তিকর হতে পারে।
 
তেলের বাজারের এমন পরিস্থিতি থাকলেও স্বস্তির চিত্র সবজির দামে।
 
রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমী বাহারি সব সবজিতে সয়লাব বাজার। সরবরাহ বাড়ায় দামও অনেকটা হাতের নাগালে। বর্তমানে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকা, প্রতি কেজি মুলা ৩০-৪০ টাকা, শালগম ৬০-৭০ টাকা, ধরনভেদে শিম ৬০-১০০ টাকা ও টমেটো ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
 
এ ছাড়া বেগুন ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা, পুরোনো আলু ৭৫-৮০ টাকা ও নতুন আলু ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
 
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কম দামে সবজি কিনতে পেরে খুশি দিনমজুর আব্দুর রাজ্জাক।
 
তিনি বলেন, সারা বছর এমন দামে তরকারি কিনতে পারলে ভালো হয়। কারণ, আমাদের আয় কম। সরকারের কাছে তাই বলবো, সবজির বাজারটা যেন এ রকমই থাকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.