রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার যমুনেশ্বরী নদীর বরাতি সেতু। সেতুর দুই দিকে শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। সবার চোখ নদীর জলের দিকে। কারণ, উজানের ঢলের সঙ্গে ভেসে আসা কচুরিপানা জমাট বেঁধেছে। মানুষ ওই জমাট বাঁধা কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে লোকজন নদী পারাপার হচ্ছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উৎসুক লোকজনের ভিড়।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে বরাতি সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের যমুনেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত পরিত্যক্ত বরাতি সেতুতে হাজারো মানুষের ভিড়। ভিড় ঠেলে নদীতে তাকাতেই দেখা যায়, লোকজন কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছেন। অনেকে মাঝনদীতে কচুরিপানার ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, ভিডিও করেছেন, কেউ কেউ আবার করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ। সেতু ও সড়কের ওপর লোকজনের পাশাপাশি রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেলের সারি দেখা যায়।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিন দিন আগে উজানের ঢলে ভেসে আসা কচুরিপানা বরাতি সেতুর উত্তর পাশের ২০০ মিটার অংশে নদীর দুই তীরে জমাট বাঁধে। ওই অংশে নদীর গভীরতা ১০ থেকে ১২ ফুট। পানির স্রোত নিচ দিয়ে বহমান থাকলেও কচুরিপানাগুলো আর নদীর ওই অংশ থেকে না সরায় গত বুধবার স্থানীয় কিছু শিশু-কিশোর ফুটবল খেলে এবং কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হয়। এ ঘটনা সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের লোকজন তা দেখতে ছুটে আসেন। হাজারো মানুষের ভিড় দেখে অনেক পথচারীও সেখানে দাঁড়িয়ে জমাট বাঁধা কচুরিপানার ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন।
ইকরচালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তাজ উদ্দিন বলেন, ‘কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে নদীর পার হচ্ছেন, এমন ঘটনা শুনে আমি নিজেও এখানে এসেছি। নদীর প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় কচুরিপানা জমাট বাঁধায় লোকজন তার ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পারপার হচ্ছেন, ছেলের দল ফুটবল খেলছে। তা দেখতে হাজারও মানুষ নদীর তীরে ও সেতুর ওপর ভিড় করছেন। কিছু লোককে কচুরিপানার বাঁধা জমাট ভেঙে দেওয়ার জন্য লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা কাজ করছেন।’
ডাঙ্গীরহাট এলাকা থেকে কচুরিপানার ওপর দিয়ে নদী পার হওয়া দেখতে আসা সোনা মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ভাই, আমরা ফেসবুকে দেখে তিনটি ভ্যানে ৩০ জন এসেছি। এটা বিরল ঘটনা। এর আগে আমরা ভাসমান কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হতে দেখিনি। তাই আজ দেখতে এলাম। এখানে প্রচুর মানুষের ভিড়।’
চরকডাঙ্গা গ্রামের বাবলু মিয়া বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারাগঞ্জ যাওয়ার সময় দেখি হাজার মানুষের জটলা। তাই রিকশা থামিয়ে এগিয়ে এলাম। নদীর ওপর ভাসমান কচুরিপানার ওপর মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
রংপুর থেকে দিনাজপুরগামী মোটরসাইকেল আরোহী দম্পতি লুৎফর রহমান ও আয়েশা খাতুন লোকজনের ভিড় দেখে বরাতি এলাকায় যাত্রাবিরতি করেন। কথা হলে আয়েশা খাতুন বলেন, ‘এখানে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ নদীর দিকে তাকাচ্ছেন। কৌতূহলে আমরাও মোটরসাইকেল থামিয়ে এখানে আসি। দেখছি কচুরিপানার ওপর দিয়ে হেঁটে মানুষ নদীর এপার থেকে ওপারে যাচ্ছেন।’
তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর সরেজমিন গিয়েছি। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে লোকজন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। নদীর ওই এলাকায় কচুরিপানা অপসারণে কাজ চলছে।’