কর্মচারীর সব পদই শূন্য

0
96
পটুয়াখালী জেলার মানচিত্র

এতে দাপ্তরিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে উপজেলার ১৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৮০০ শিক্ষক-কর্মচারী।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে জনবলসংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ওই কার্যালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সব পদ শূন্য। এতে একধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন উপজেলার ১৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৮০০ শিক্ষক-কর্মচারী।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই কার্যালয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার একটি পদ, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার ছয়টি পদ, তৃতীয় শ্রেণির চারটি পদ ও চতুর্থ শ্রেণির একটি পদ রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পদে তিনজন কর্মরত আছেন আর তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পাঁচটি পদের মধ্যে সব কটিই শূন্য রয়েছে।

তৃতীয় শ্রেণির শূন্যপদগুলো হলো উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক একজন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর একজন ও অফিস সহকারী দুজন এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী অফিস সহায়ক একজন। সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি একমাত্র তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী অফিস সহকারী মো. লিটন হোসেনকে অন্যত্র বদলি করা হলে স্থবির হয়ে পড়েছে দাপ্তরিক সব কার্যক্রম।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে দেখা যায়, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রশিক্ষণের কাজে কার্যালয়ের বাইরে রয়েছেন। কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষা করছেন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সেবাগ্রহীতারা। এ সময় কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে।

ডোমরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোজাম্মেল হক মারা গেছেন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তাঁর মৃত্যুর পর পারিবারিক অবসর ভাতা পরিবারের সদস্যদের নামে হস্তান্তরের জন্য মেয়ে পাপিয়া সুলতানা উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে বারবার ধরনা দিয়ে এত দিনেও কাজটি করাতে পারেননি। পাপিয়া সুলতানা বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস পারিবারিক অবসর ভাতা বন্ধ আছে। মায়ের নামে ভাতা হস্তান্তর করার জন্য বারবার এসেও ফিরে যেতে হয়।

মধ্য আমড়াগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘রুটিন মেইনটেন্যান্সের কাগজপত্র নিয়ে কয়েক দিন ধরে ঘুরছি, কিন্তু জমা দিতে পারিনি।’

সুবিদখালী বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাদিজা বেগম এবার হজে যাওয়ার জন্য ছুটি অনুমোদন-সংক্রান্ত কাজে কয়েক দিন ধরে কার্যালয়ের সামনে এসে ফিরে গেছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির সভাপতি ও দক্ষিণ পশ্চিম সুবিদখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষকদের বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রেখে দাপ্তরিক কাজের জন্য উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে এসে দিনের পর দিন ফিরে যেতে হচ্ছে। শিক্ষা কর্মকর্তা বিভিন্ন কাজে অনেক সময় বাইরে থাকেন। কোনো কাজ একবারে বা এক দিনে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না।

স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে স্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল হক বলেন, ‘১৪৩টি বিদ্যালয়ের প্রায় ৮০০ শিক্ষকের বেতন-ভাতার বিল প্রস্তুত, বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা (স্লিপ), শ্রান্তি বিনোদন ছুটি, বিশেষ ছুটি (হজ, চিকিৎসা), ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বিদ্যুৎ বিল প্রদানসহ দৈনন্দিন তথ্য আদান-প্রদানের যাবতীয় কাজ ছাড়াও বিদ্যালয় পরিদর্শন, উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়—এমন বহুবিধ কাজ সামলাতে গিয়ে আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একমাত্র অফিস সহকারী অন্যত্র বদলি করার পর দুজন অফিস সহকারী এখানে প্রতিস্থাপন করেছিলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। কিন্তু তাঁরা কেউ যোগ দেননি। ফলে ভোগান্তি রয়েই গেছে। মৌখিক আদেশে পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় থেকে একজন অফিস সহকারী মাঝেমধ্যে এনে কিছু কাজ করা হয়। এ ছাড়া এই কার্যালয়ে তিনজন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদও শূন্য রয়েছে।’

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান বলেন, ‘মির্জাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে জনবলসংকট রয়েছে। জনবল সংকটের তথ্য প্রতি মাসেই লিখিতভাবে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। আমতলী থেকে মির্জাগঞ্জে আবুল হোসেন নামের একজন অফিস সহকারী মির্জাগঞ্জে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তাঁকে যোগদানের করানোর জন্য চেষ্টা চলছে। আশা করি সমস্যা সমাধান হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.