ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়িচালকের ২ কোটি টাকার ডুপ্লেক্স বাড়ি!

0
15
আতিকুর রহমান
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে আতিকুর রহমান (৩৮) নামে এক প্রাইভেটকারচালক প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করে আলোচনায় এসেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়িচালক হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, অবৈধ পন্থায় কামানো টাকা দিয়ে আতিক ডুপ্লেক্স বাড়িটি নির্মাণ করেছেন।
 
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিংগাইর পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিমনগর মহল্লার মৃত লেহাজুদ্দিনের ছেলে আতিকুর রহমান। ছোট বেলায় অর্থাভাবে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে লেখাপড়ার ইতি টানেন। এরপর বেবিট্যাক্সি ড্রাইভিংয়ে মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার কর্মজীবন। বড় ভাই সরকারি দপ্তরে ড্রাইভিং পেশায় চাকরির সুবাদে এক সময়ে তার সহযোগিতায় আতিক কাজ পান ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর প্রাইভেটকারচালক হিসেবে। সেই সুবাদে অবৈধ পথে আয় করেন বহু টাকা।
 
তার গ্রামের বাড়ি কাশিমনগর মহল্লায় গড়ে তোলা ডুপ্লেক্স বাড়িটির বাজার মূল্য ২ কোটি টাকার ওপরে। এ ছাড়াও ঢাকায় তার রয়েছে একাধিক ব্যবসা। একজন প্রাইভেটকারচালক হয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের বিষয়টি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তারা আরও বলেন, আতিক ১৮ হাজার টাকা বেতনে সামান্য গাড়িচালকের চাকরি করে কীভাবে শহরে একাধিক ব্যবসা ও গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন। বিষয়টি টক অব দ্য সিংগাইরে পরিণত হয়েছে।
 
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আতিকুর রহমান সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগে গাড়ি চালকের চাকরি নিলেও তিনি সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ি চালাতেন। এ সুযোগে তাদের ছত্রছায়ায় নানা অনিয়ম ও তদবির বাণিজ্য করে অবৈধ উপায়ে উপার্জন করেন মোটা অংকের টাকা। সেই টাকা দিয়েই গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ি ও ঢাকায় ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার তোপের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আতিকের এ বাড়িটি নিয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছেন। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আতিক সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগে গাড়ি চালকের চাকরির সুবাদে ওবায়দুল কাদেরের পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরিচিতি পান ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়িচালক হিসেবে।
 
এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, করোনাকালীন সময়ে সিংগাইর থেকে ইটভর্তি ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করতে বিধিনিষেধ থাকলেও মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর নাম ব্যবহার করে আতিক গাড়ি প্রতি ৫ হাজার টাকা করে নিতেন। ফলে ভাটা মালিকরাও তার শরণাপন্ন হতেন। এভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এ ছাড়াও আতিকের রাজধানী ঢাকায় রয়েছে জেন্টস পার্লার ও রেস্টুরেন্টের ব্যবসা।
 
আতিকুর রহমানকে তার বাড়িতে গিয়ে না পেয়ে কথা হয় তার ছোট বোন রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার ভাই ঢাকায় থাকেন সরকারি চাকরি ও ইটের ব্যবসা করেন। সাত-আট বছর মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ি চালিয়েছেন। এখন ছোট-খাটো সাহেবের গাড়ি চালান। বেঁচে থাকাবস্থায় মাকে দেখানোর জন্য ভাই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন।
 
আতিকুর রহমানের মা ছাহেলা খাতুন বলেন, আমার ছেলে সরকারি গাড়ি চালায়। পাশাপাশি ঢাকায় দুটি দোকান আছে, পার্টনারে ব্যবসা করে। তিনি আরও বলেন, বাড়ি নির্মাণে আনুমানিক ২ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এখন আমার ছেলেটা চাপে আছে, বিভিন্ন লোকজন বাড়িতে এসে টাকা দাবি করে বলেও জানান তিনি।
 
সিংগাইর উপজেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউনুস বলেন, এ বিষয়ে কেউ দুদকে অভিযোগ করলে কমিশন তদন্ত করে দেখবেন। আমাদের কাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করা। তদন্ত করার এখতিয়ার আমাদের নেই।
 
জানতে চাইলে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আজিজ উল্লাহ বলেন, যদি এরকম হয়ে থাকে তবে সেটা সরকারিভাবে তদন্ত হবে, মামলা হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং অ্যাকশন নেবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.