সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মাস (জুলাই) থেকে মূল বেতনের ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তবে এমপিওভুক্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক–কর্মচারী এ সুবিধা পাবেন কি না, এখনো তা কেউ বলতে পারছেন না। এ বিষয়ে শিক্ষা বিভাগ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। আর অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বেসরকারি হলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে মাসে মূল বেতন ও কিছু ভাতা পান। সরকার ঘোষিত বৈশাখী ভাতা এবং বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) সুবিধাও তাঁরা পান। গত মাসে জাতীয় সংসদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণার পর থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এ সুবিধা পাবেন কি না তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রণোদনা পাওয়া নিয়ে এমন অনিশ্চয়তায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাঁদের দাবি, বর্তমানের বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে হলেও তাঁদের এই সুবিধা দেওয়া হোক।
চলতি জুলাই মাসে শুরু হওয়া নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেট পাস করার সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনা করে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এ সুবিধা পাবেন প্রায় ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবী। অর্থ বিভাগ সূত্র বলছে, তাদের প্রাথমিক হিসাবে প্রণোদনা দিতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বছরে বাড়তি ব্যয় হবে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে প্রায় ৩০ হাজার। এগুলোয় শিক্ষক-কর্মচারী আছেন সাড়ে পাঁচ লাখের মতো। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭১৫ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ১ লাখ ৬৫ হাজারের মতো। আর কারিগরিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ২০ হাজারের বেশি।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ গতকাল সোমবার বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন কি না এ বিষয়ে এখনো তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন।
এ বিষয়ে জানতে গতকাল সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির দপ্তরে গিয়ে মন্ত্রীর দেখা পাওয়া যায়নি। মন্ত্রীর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, দপ্তরের সংস্কারকাজ চলছে। এ জন্য মন্ত্রী কার্যালয়ে আসেননি। এরপর মন্ত্রীর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এমপিওভুক্তদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
শিক্ষক-কর্মচারীরা যা বলছেন
মূল বেতনের ৫ শতাংশ প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরাও। আওয়ামী লীগ সমর্থক বেসরকারি শিক্ষকদের সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ) গত শনিবার জরুরি সভা করে সরকার ঘোষিত এ প্রণোদনায় বেসরকারি শিক্ষক–কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানায়।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জামিল মো. সেলিম বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের মতো আমরা বৈশাখী ভাতা পাই, বার্ষিক ইনক্রিমেন্টও পাই। প্রণোদনা পাওয়া আমাদের অধিকার। আশা করব, সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরও এ সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেবে। এ বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৭ জুলাই সমিতির সভায়।’
পেনশনভোগীরাও অনিশ্চয়তায়
এদিকে পেনশনভোগী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকার ঘোষিত ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন কি না সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁদের পর্যায়ে কোনো তথ্য নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি একটি সংস্থার প্রধান সোমবার বলেন, পেনশনভোগীদেরও এই প্রণোদনা দেওয়া দরকার। তাঁর আশা, সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে।