প্রাথমিকে স্নাতক, কলেজ ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিক পাস হচ্ছে সভাপতির যোগ্যতা

0
159
উচ্চমাধ্যমিক

বর্তমানে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি হতে হয়। এখন বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক করা হচ্ছে। এত দিন ধরে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারিত না থাকায় যে কেউ ওই পদে বসে শিক্ষকদের ওপর খবরদারি করে আসছেন।

এ অবস্থায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে উচ্চমাধ্যমিক করার উদ্যোগকে ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে দেখছেন শিক্ষকেরা। তাঁদের মতে, এটি পরীক্ষামূলকভাবে চলতে পারে। তবে এটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি পাস করলে ভালো হতো। এ ছাড়া শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়ালেই হবে না; কাজেও পরিবর্তন আনতে হবে। না হলে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর হবে না। কারণ, এখনো পরিচালনা কমিটিতে শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে আছে—এমন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। এ জন্য শিক্ষকদের অনেকেই চান পরিচালনা কমিটি না থাকুক।

‘একই ব্যক্তির পরপর দুবারের বেশি সভাপতি না হওয়ার উদ্যোগটি ভালো। কারণ, একই ব্যক্তি সভাপতি পদে দীর্ঘদিন থাকলে আধিপত্য বিস্তারের আশঙ্কা থাকে। তবে সভাপতি হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা শুধু উচ্চমাধ্যমিক পাস হলেই কতটুকু ভালো হবে, সেটি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, সভাপতি, বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ।

এমন অবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধান মালা সংশোধন করে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ নতুন কিছু নিয়ম যুক্ত করা হচ্ছে। বর্তমানে ২০০৯ সালের বিধিমালায় চলছে পরিচালনা কমিটি।

আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব–কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে কয়েক দিন আগে বলেন, ইতিমধ্যে সংশোধিত খসড়াটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে অনুমোদন হয়ে গেছে। এখন এটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের (আইনি যাচাই) জন্য আছে। ভেটিং হয়ে গেলেই এটি চূড়ান্ত হবে। প্রবিধানমালায় বিষয়বস্তু একই থাকবে। তবে প্রতিটি বোর্ড আলাদা আলাদা করে নিজেদের নামে এটি জারি করবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এটি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দেশে বর্তমানে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৩৫ হাজারের বেশি। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৯ হাজারের বেশি। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে। এর মধ্যে কলেজ পর্যায়ের পরিচালনা কমিটিকে বলা হয় গভর্নিং বডি এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিকে বলা হয় ম্যানেজিং কমিটি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল সংগ্রহ, শিক্ষক নিয়োগ, বরখাস্ত, বাতিল বা অপসারণ, নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করা ইত্যাদি পরিচালনার কাজ কমিটির হাতে। উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত বাজেটসহ বার্ষিক বাজেট অনুমোদন, সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষিত ও সাধারণ তহবিল, অন্যান্য তহবিল, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বিলে সই করাসহ মোটামুটি বিদ্যালয়ের অধিকাংশ কাজই হয় পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে।

অভিযোগ আছে, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মানোন্নয়নের চেয়ে যেসব কাজে আর্থিকভাবে লাভ হওয়ার সুযোগ আছে, সেগুলো নিয়েই বেশি আগ্রহী থাকেন পরিচালনা কমিটিতে থাকা ব্যক্তিরা।

একসময় স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাঁদের চাওয়া অনুযায়ী নিজ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতেন। তবে ২০১৬ সালে উচ্চ আদালতের রায়ের ফলে সংসদ সদস্যরা চাইলেও পদাধিকারবলে সভাপতি হতে পারেন না। অবশ্য, এখনো মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্যদের আত্মীয়স্বজন, ঘনিষ্ঠজন, অনুসারী বা দলীয় নেতা-কর্মীরাই পরিচালনা কমিটির সভাপতি হন।

সংশোধন হতে যাওয়া প্রবিধানমালা অনুযায়ী একজন ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি সভাপতি হতে পারবেন না। এখন একজন বারবার সভাপতি হতে পারেন। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুটি মাধ্যমিক ও দুটি উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারবেন। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি মোট চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশি সভাপতি হতে পারবেন না।

এ ছাড়া সংশোধন হতে যাওয়া প্রবিধানমালায় আয়-ব্যয়ের হিসাবেও অধিক স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে বলে জানালেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, যদি কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ করেন এবং তদন্তে তা প্রমাণিত হয়, তাহলে শিক্ষা বোর্ড কমিটি বাতিল করতে পারবে। এটি এখনো আছে, তবে সংশোধন হতে যাওয়া প্রবিধানমালায় জবাবদিহির জায়গাগুলো অনেক বেশি কড়াকড়ি করা হয়েছে।

মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি হয় ১১ থেকে ১৪ সদস্যের। এর মধ্যে একজন সভাপতি থাকেন। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের কমিটিও একই রকমের।

প্রবিধানমালা সংশোধন করে নতুন নিয়ম যুক্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি প্রবীণ শিক্ষকনেতা মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, একই ব্যক্তির পরপর দুবারের বেশি সভাপতি না হওয়ার উদ্যোগটি ভালো। কারণ, একই ব্যক্তি সভাপতি পদে দীর্ঘদিন থাকলে আধিপত্য বিস্তারের আশঙ্কা থাকে। তবে সভাপতি হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা শুধু উচ্চমাধ্যমিক পাস হলেই কতটুকু ভালো হবে, সেটি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, ভালো-মন্দের বিষয়টি নির্ভর করে ব্যক্তির ওপর। তাই এখানে ব্যক্তিটি ভালো হওয়া বেশি জরুরি। তবু এটি পরীক্ষামূলকভাবে চলতে পারে।

মোশতাক আহমেদ

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.