বিশ্বায়নের এই যুগে অপরাধীরাও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সহজলভ্য প্রযুক্তি যে কোনো দেশের অপরাধকে দ্রুত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিসরে বিস্তৃত করছে। আগামীর পুলিশের চ্যালেঞ্জ প্রযুক্তির সঙ্গে দ্রুত তাল মেলানো। সাইবার জগতে নানামাত্রিক অপরাধ দিন দিন বাড়তে পারে। এই ধরনের অপরাধ কোনো দেশের সীমারেখা দিয়ে বন্ধ করা যায় না। আগামী প্রযুক্তি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেটাভার্স, ওয়েব-৩ প্রযুক্তি। এর পাশাপাশি ভার্চুয়াল শৃঙ্খলা রক্ষার প্রত্যয় এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এগিয়ে যেতে চায়। পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিট ডিএমপির ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। ঢাকায় পুলিশি সেবার মান, জঙ্গিবাদ, রাজধানীর অসহনীয় যানজট ও আগামী নির্বাচন ঘিরে পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, এখন সমস্যা সমাধানে মানুষকে থানায় থানায় ঘুরতে হয় না। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হয়। ডিএমপিতে ৩০৬ বিটে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা অপরাধ দমনে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করছে।
পুলিশের পেশাদারিত্ব বাড়াতে আরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন রয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এটা ঠিক, পুলিশ কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্ব বাড়াতে আরও প্রশিক্ষণ জরুরি। নিয়মিত প্রশিক্ষণ পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাধ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়ে।
থানার সেবার মান বাড়ানোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন- ‘তোমাদেরকে জনগণের পুলিশ হতে হবে।’ ডিএমপি সেই ব্রত নিয়ে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রতিটি থানায় নারী, শিশু ও বয়স্কদের সেবা দেওয়ার জন্য আলাদা ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। নাগরিকদের আইনি পরামর্শ, জিডি বা অভিযোগ লিখতে সহযোগিতা করতে একজন করে সার্ভিস ডেলিভারি অফিসার রয়েছেন। জিডি বা মামলা হলে তা কেন্দ্রীয়ভাবে তদারক করা হয়। থানায় যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন, এটা নিশ্চিত করতে রিয়েল টাইম মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করে নাগরিক সেবা দেওয়ার প্রত্যয় রয়েছে ডিএমপির। উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গড়ে উঠবে ‘স্মার্ট ডিএমপি’।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশ কখনও কারও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ভবিষ্যতে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বাধা থাকবে না। তবে কর্মসূচির নামে জানমালের ক্ষতি করলে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। জননিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
ঢাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পুলিশের কোনো দুর্বলতা রয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকার জনসংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পরিবহন। তবে সেই তুলনায় রাস্তা বাড়ছে না। এ ছাড়া বর্তমানে রাজধানীতে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজও চলমান। যানজট মোকাবিলায় ডিএমপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করেছি। ঢাকায় জনসংখ্যার চাপ থাকায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে যুগোপযোগী পরিকল্পনা রয়েছে। ট্রাফিক সেন্সর এবং রিয়েল টাইম মনিটরিংয়ের মতো প্রযুক্তি ব্যবহারসহ ইন্টেলিজেন্স ক্যামেরা সিস্টেম বাস্তবায়ন, ট্রাফিক সেন্সর ব্যবহার করা যেতে পারে।
জঙ্গিবাদের ঝুঁকির ব্যাপারে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, বাংলাদেশের জনগণ জঙ্গিবাদ কখনও সমর্থন করেনি। পুলিশ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে উগ্রবাদ মোকাবিলা করেছে। জঙ্গিবাদ প্রতিহত করতে গিয়ে পুলিশ জীবনও দিয়েছে। ভবিষ্যতেও অসীম সাহসিকতা, বীরত্ব ও আত্মত্যাগের ব্রত নিয়ে কঠোরভাবে জঙ্গিবাদ রুখে দেওয়া হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। কিন্তু কোনো মহল বা গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।
মাদক নির্মূলের ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার বলেন, মাদক নির্মূলে শূন্য সহনশীল নীতি অনুসরণ করে ডিএমপি। সন্তানকে সুপথে রাখতে অভিভাবকদের দায়িত্ব রয়েছে। পুলিশের কাজ হলো মাদকের সাপ্লাই চেইন বন্ধ রাখা। পুলিশ সেটা দৃঢ়ভাবে করছে। পুলিশ সদস্যরা মাদকের সঙ্গে জড়ালে বিন্দুমাত্র ছাড় পাচ্ছে না। অনেককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে সোজা বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।