
দেশের প্রথমসারির বাংলা দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে কার্যালয়ে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা ওই দুটি সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এসময় উভয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সংবাদকর্মীরা ভবনের ভেতর অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয় দুটি অনেকাংশেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যেন পোড়া শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবন দুটি।

ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আগুনে ঝলসে যাওয়া ভবন দুটির সামনে সকাল থেকেই ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ভবন দুটির প্রধান ফটকে দায়িত্বরত অবস্থায় দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
এদিন সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর ভবন থেকে আগুনের ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। আগুন পুরোপুরিভাবে নেভাতে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

জানা যায়, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার রাত ১২টার কিছু আগে একদল লোক শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে কারওয়ান বাজারের দিকে অগ্রসর হয়। মিছিলটি প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে পৌঁছে কার্যালয়টি ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে।
একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধরা লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রথম আলো কার্যালয়ে ভাঙচুর শুরু করে। হামলায় কার্যালয়ের বেশিরভাগ জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলা হয়। রাত ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে টেবিল-চেয়ার ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বাইরে রাস্তায় বের করে নিয়ে আসে এবং সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ভবনটিতেও আগুন দেওয়া হয়।

প্রথম আলো অফিসে আগুন দেওয়ার পর উত্তেজিত জনতা রাজধানীর ফার্মগেটে ডেইলি স্টার অফিসের দিকে অগ্রসর হয়। পরে তারা সেখানেও হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে।
একপর্যায়ে হামলাকারীদের থামাতে রাতে ডেইলি স্টার ভবনের সামনে গিয়ে একদল ব্যক্তির হাতে নাজেহাল হন নিউ এইজ সম্পাদক ও সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভাপতি নূরুল কবীর। এসময় তাকে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ বলে স্লোগান দেওয়া হয়।

হামলার সময় সংবাদমাধ্যম দুটির অনেক কর্মী ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বেশ কয়েক ঘণ্টা পর ভোরের দিকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর শুক্রবার প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা দুটির প্রকাশনা বন্ধ রয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে একদল লোক শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট চালায় এবং সেখানে আগুন দেয়।
একই রাতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বাঙালির সংস্কৃতিচর্চার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ভবনে হামলা ও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ছায়ানট ভবনেও দেওয়া হয় আগুন। একই সময়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়িটিতে আরও এক দফা হামলা চালানো হয়।

ওই রাতেই রাজশাহী ও চট্টগ্রামসহ বেশ কিছু অঞ্চলে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়। একই রাতে হামলা চালানো হয় চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ড. রাজীব রঞ্জনের বাসভবনে।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত ১২ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। দেশে চিকিৎসার পর গত সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে খবর আসে, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।

















