এক বছরে মেটা ৪ হাজারের বেশি ফেসবুক পোস্ট সরিয়েছে

0
45
মেটা, রয়টার্স

স্থানীয় আইন লঙ্ঘনের কারণে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ৪ হাজার ৩০৮টি ফেসবুক পোস্টে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মেটা। এ ছাড়া একই সময়ে ১৪টি প্রোফাইলেও (অ্যাকাউন্ট) নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেয় মেটা।

বিশ্বের শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা বছরে দুবার স্বচ্ছতা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই স্বচ্ছতা প্রতিবেদন থেকে বাংলাদেশ–সম্পর্কিত এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের আইন লঙ্ঘনের জন্য মেটা ৫ হাজার ৮৭৮টি আইটেমে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩০৮টি ফেসবুক পোস্ট আর ফেসবুক প্রোফাইল ১৪টি। এর মধ্যে শেষ ছয় মাসে ৩ হাজার ৩০০টির বেশি আইটেমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে ফেসবুক পোস্ট ২ হাজার ৪৯টি আর প্রোফাইল ৪টি।

গত বছরে মেটার কাছে বাংলাদেশ সরকার ব্যবহারকারীর তথ্য চেয়ে ২ হাজার ৪৭৩টি অনুরোধ করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধ (জুলাই-ডিসেম্বর) থেকে মেটার কাছে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের পরিমাণ টানা বাড়তে দেখা গেছে।

মেটার সর্বশেষ স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেটার কাছে বাংলাদেশ সরকার ব্যবহারকারীর তথ্য চেয়ে ১ হাজার ৪৮৫টি অনুরোধ করেছে। এর মধ্যে এর মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় অনুরোধ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৩৩টি আর জরুরি ভিত্তিতে চাওয়া অনুরোধ ছিল ৫২টি। এর মাধ্যমে সরকার ২ হাজার ১৬৪ জন ব্যবহারকারী সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে। সরকারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মেটা ৬৭ দশমিক ৮১ শতাংশ ক্ষেত্রে সাড়া দিয়েছে।

এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সরকার ৯৮৮টি অনুরোধ করে। এর মাধ্যমে ১ হাজার ৪৫৪ ব্যবহারকারীর বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। এ সময় ৬৭ শতাংশের বেশি সাড়া দেয় মেটা।

নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে প্রতিবেদন পেয়ে মেটা পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। মেটা জানিয়েছে, জুয়া এবং নিয়ন্ত্রিত পণ্য, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে যায় এমন বিষয়বস্তু, অশ্লীল আচরণ, ধর্মের ওপর আক্রমণ এবং বিভিন্ন অপরাধের জন্য স্থানীয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে বিটিআরসি এসব অনুরোধ করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ অন্যান্য স্থানীয় আইন লঙ্ঘনের কারণে এসব আইটেমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

গুগলে সমালোচনার আধেয় সরানোর অনুরোধ বেশি

এদিকে বিশ্বের শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন গুগলের কাছেও প্ল্যাটফর্মটির বিভিন্ন সেবা গ্রহণকারীর তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে গুগলের কাছে ৪৯টি অনুরোধে সরকার ৮৫ জন ব্যবহারকারীর তথ্য চায়। এতে বছরের প্রথমার্ধে গুগল ২৩ শতাংশ এবং দ্বিতীয়ার্ধে ২২ শতাংশ তথ্য সরবরাহ করে।

আধেয় সরানোর জন্য বাংলাদেশ গত বছর ১ হাজার ৩৯১টি অনুরোধ করে। গুগল বলছে, সরকারি সংস্থাগুলো স্থানীয় আইন লঙ্ঘনের দায়ে এবং আদালতের আদেশে আধেয় সরানোর অনুরোধ করে থাকে। গুগল এ ক্ষেত্রে নিজস্ব নির্দেশিকা এবং নীতি লঙ্ঘন করে কি না, তা পর্যালোচনা করে থাকে।

২০২৩ সালে গুগলের কাছে ৫ হাজার ৬৬৭টি আধেয় সরানোর অনুরোধ করে সরকার। এর মধ্যে ইউটিউবের আধেয় ৫ হাজার ৪৮৯টি। বাকি অনুরোধগুলোর মধ্যে আছে অ্যাপস, ওয়েবসাইট।

আধেয় সরানোর অনুরোধে গুগল বছরের প্রথম ও দ্বিতীয়ার্ধে অর্ধেকের কম ক্ষেত্রেই সাড়া দিয়েছে। এ ছাড়া সবচেয়ে বেশি—৫৯৪টি অনুরোধ করা হয়েছে সরকারের সমালোচনার জন্য। এরপর আছে ৫০৪টি মানহানির অনুরোধ।

গুগলের ভিডিও প্ল্যাটফর্ম সেবা ইউটিউব থেকে ২০২৩ সালে ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪০টি ভিডিও সরানো হয়েছে। ভিডিও সরানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব সময়ই শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় থাকে।

এ ছাড়া টিকটকের কাছে গত বছর সরকার আধেয় সরানোর জন্য ৭১৩টি অনুরোধ করে। আধেয়র সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৬১টি। টিকটক সরিয়েছে ৩ হাজার ৫২৬টি। এ ছাড়া গত বছর টিকটকের ২৮টি অ্যাকাউন্ট সরানোর অনুরোধ করে সরকার। টিকটক ১৩টি অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বলে প্রতিষ্ঠানটির স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে জানায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.