বিদ্যা বালানের সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল ২০১৯ সালে; মুম্বাইয়ের সান এন স্যান্ড হোটেলে ‘মিশন মঙ্গল’ ছবির প্রচার পর্বের সাক্ষাৎকারে। এর পর বিদ্যাকে পাওয়া গেল চার বছর পর। গতকাল মুক্তি পেয়েছে বিদ্যার নতুন সিনেমা ‘নিয়ত’। এই সিনেমা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হলো তাঁর সঙ্গে
আবার আপনি গোয়েন্দার ভূমিকায়…
এটিকে ঘটনাচক্র বলতে পারেন। ঘটনাচক্রেই ঘটেছে বা ঘটে যাচ্ছে। সিনেমায় এমনটি অস্বাভাবিক নয়। দেখতে হবে অভিনেত্রী হিসেবে চরিত্রটি আমাকে কতখানি আকর্ষণ করেছে। সরাসরি না থেকেও বেশ কয়েকটি সিনেমায় বকলমে গোয়েন্দার চরিত্রেই অভিনয় করেছি। যেমন ‘কাহানি’, ‘কাহানি ২’ ইত্যাদি। অনেক জায়গায় সরাসরি হয়তো নেই, কিন্তু যে চরিত্রে পর্দায় অভিনয় করছি, তার মধ্যে গোয়েন্দাসুলভ সত্যানুসন্ধান রয়েছে। সেই চরিত্রটি কোনো এক দৃষ্টিকোণ থেকে দর্শককে টেনে রাখছে আগ্রহের সঙ্গে। সেটিকে সব সময় রোমান্স বা অ্যাকশন দিয়েই দেখাতে হবে এবং অভিনেত্রী হিসেবে আমাকে সেই চরিত্রই করতে হবে, তার কোনো মানে নেই। আমাকে দেখতে হবে দিনের শেষে দর্শক আমার করা চরিত্রটি পছন্দ করল কিনা।
গত চার বছর ওটিটিতে আপনার যে ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছে, তার মধ্যে ‘শকুন্তলা দেবী’ বা ‘শেরনি’ আশা পূরণ করতে পারেনি। আফসোস হয়?
একজন অভিনয়শিল্পীর কাজ তাঁর চরিত্রকে পরিচালক এবং চিত্রনাট্যের দাবি অনুযায়ী যতটা পারা যায় প্রাণবন্ত, বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরা। তার পরের ঘটনার কোনো ভূমিকা পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের থাকে না। তাদের কাজকে সম্পূর্ণ করে তাঁরা ছেড়ে দেন সাধারণ দর্শকদের ওপর। সিনেমার ব্যবসা সৃষ্টিশীল ব্যবসা। সে জন্যই যে কোনো সৃষ্টিশীল কাজের ভবিষ্যতের মধ্যে একটা অপ্রত্যাশিত উত্তর অপেক্ষা করে থাকে। তা ‘হ্যাঁ’ হতে পারে, আবার ‘না’ হতে পারে। উত্তর যা-ই হোক না কেন, তা মেনে নিতে হয়। তাই বলে কাজ থামিয়ে রেখে কেউ তো আর স্থবির হয়ে যেতে পারে না। কাজে ফিরতেই হয়।
আপনার নতুন ছবি ‘নিয়ত’-এর ট্রেলার দেখে অনেকেই মনে করছেন, এটি ড্যানিয়েল ক্রেগ অভিনীত ‘গ্লাস অনিয়ন: আ নাইভস আউট মিস্ট্রি’র ভাবনা থেকে নেওয়া। কেউ কেউ মনে করছেন, আগাথা ক্রিস্টির লেখা উপন্যাসের প্রচুর প্রভাব রয়েছে এই ছবিতে। আপনি কী বলেন?
পৃথিবীতে যে কোনো সাসপেন্স থ্রিলার বা গোয়েন্দাধর্মী ছবিগুলোর মধ্যে একটি চরিত্রগত মিল আপনি সব সময় খুঁজে পাবেন। থ্রিলার বা গোয়েন্দাধর্মী ছবি নিয়ে যখনই কোনো নতুন সৃষ্টি হয়েছে, তখনই এ ধরনের তুলনা সামনে এসেছে। নতুন কিছু নয়। আমার ব্যক্তিগত মতে, এটা তো খুবই ভালো যে আমাদের ছবির টিজার দেখে দর্শকদের মধ্যে এ ধরনের তুলনা বা কৌতূহল বা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এটিই তো অনেক। একটি নতুন থ্রিলার যখনই সামনে আসছে, সেটি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে উদ্দীপনা তৈরি হচ্ছে, তার মধ্য দিয়েই আপনার নতুন গল্প বলার ধরন তাদের এক নতুন জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে প্রাথমিকভাবে যে মিল, তুলনা তৈরি হয়েছে; মুক্তি পাওয়ার পর ছবিটি দেখে বোঝা গেল, সেটি চরিত্রগত দিক থেকে সাসপেন্সধর্মী হলেও ঘটনার দিক থেকে এক নয়। বৈচিত্র্যের এই আসল ছবিটা ছবির মুক্তির আগ পর্যন্ত দর্শকদের মধ্যে একটা ধাঁধা, জিজ্ঞাসা তৈরি করে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, কোনো থ্রিলার মুক্তি পাওয়ার আগে সাধারণ মানুষের এ ধরনের কৌতূহল নতুন ছবির ক্ষেত্রে খুব কাজে লাগে (হাসি)।
হিন্দি সিরিয়াল দিয়ে অভিনয় শুরু করেছিলেন। পরে সিনেমায় এলেন। গত ২০ বছরে ৪০টির মতো হিন্দি ছবির জার্নিকে কীভাবে দেখবেন?
ঘুমিয়ে থেকে যে স্বপ্ন আপনি দেখেন, ঘুম ভাঙার পর তার সঙ্গে কতটা মিল থাকে (হাসি)? চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যকার ফারাকটাই যদি না থাকত, তাহলে স্বপ্ন আর বাস্তব শব্দ দুটো একাকার হয়ে যেত। আমরা সবাই চেষ্টা করি স্বপ্নকে সাকার করার। বাস্তবে তা পাওয়ার মধ্যে উঁচু-নিচু যে ব্যাপার থাকে, তা নিয়ে খুশি থাকাই জীবন। আপনার যতটুকু পাওয়ার, ততটুকুই পাবেন। ফলে এই এক জীবেন যা পেয়েছি তা নিয়ে খুশি থাকাই ভালো নয় কি (হাসি)? তার চেয়েও বড় কথা, কলেজে পড়তে পড়তে যখন অভিনয়ের ইচ্ছা হলো, তখনই নিজেকে নিয়ে খুব উঁচুতে, এক নম্বর নায়িকা হওয়ার কথা ভাবিনি। অভিনয় ভালো লাগত বলে অভিনয়ে এসেছি। এক নম্বর নায়িকা হওয়ার জন্য নয়। তাই আজ আমি যা পেয়েছি, যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেটি নিয়ে আমার মধ্যে নতুন করে হতাশার কোনো জায়গা নেই।
মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করলেও বড় পর্দায় আপনার শুরু বাংলা সিনেমা ‘ভালো থেকো’ দিয়ে। তার পরই আরেকজন বাঙালি পরিচালক ‘পরিণীতা’র মাধ্যমে বলিউডে প্রতিষ্ঠা দিলেন। ব্যাপারটি কাকতালীয় মনে হয়?
পুরোটাই কাকতালীয় এবং ভীষণ আশ্চর্যের। ‘ভালো থেকো’ এবং ‘পরিণীতা’– এই ছবি দুটি আমাকে বড় পর্দার অভিনয়ে চলার পথ দেখিয়েছে। আরও একটি ছবির নাম বলব, তা হলো ‘কাহানি’। সুজয় ঘোষের এই ছবি সাধারণ দর্শকদের কাছে আমাকে অভিনেত্রী হিসেবে অন্য মাত্রা দিয়েছে। সুতরাং এই দুটি নয়; তিনটি ছবিকে কাউন্ট করুন। এগুলো করতে করতে আমার মনে হয়েছে, আমি বাঙালি। মালায়ালি নয় [জোরে হাসি]। মনে মনে বাঙালি হয়ে উঠতে হয়েছে। বাংলায় কথা বলতে শিখেছি। বাঙালিদের রীতি-রেওয়াজ শিখেছি। অনেক ছোট ছোট বাংলা শব্দের মানে এবং তার ব্যবহার শিখতে ও জানতে পেরেছি। আমার অভিনয় জীবনে এটিও একটি ঘটনাচক্র [হাসি]।