সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মর্টার শেল ও গোলাগুলি বন্ধ হয়নি। এতে বান্দরবানের তুমব্রু-টেকনাফ সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ভোরে মিয়ানমারে ছোড়া তিনটি মর্টার শেল একে একে বাংলাদেশের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রুতে এসে পড়ে। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে ওপারের অস্থিরতায় এপারে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীসহ রোহিঙ্গাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তুমব্রু সীমান্তে কোনাপাড়া ও পশ্চিমকুল পাড়া এলাকায় মিয়ানমারের ছোঁড়া তিনটি মর্টার শেল এসে পড়েছে। আমার এলাকায় পশ্চিমকূলে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম ও সাবেক মেম্বার গফুর চৌধুরীর বাড়ির উঠানে এসে মর্টার শেল পড়েছে। তবে কেউ হতাহতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘মর্টার শেলগুলো বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাতে ব্যাপক মর্টার শেল ও গোলাগুলি হলেও বুধবার সকাল থেকে কিছুটা কমেছে। এই সীমান্তের অধিকাংশ লোকজনের সংসার চলে চাষাবাদ করে। কিন্তু সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনায় এসব লোকজন জীবিকা নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন।’
সীমান্তের বসবাসকারীরা বলছেন, বুধবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত বান্দরবানের তুমব্রু ও টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় মর্টার শেল ও গোলাগুলি শব্দ শুনেছেন। এতে সীমান্তের বসবাসকারীদের পাশাপাশি ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা নাফ নদীর পাশে এসে জড়ো হয়ে ওপারে কী হচ্ছে তার খোঁজ-খবর নেন মুঠোফোনে।
জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বসবাসকারী ছব্বির আহমদ। গোলাগুলি খবর পেয়ে সীমান্তের নাফ নদীতে এসে মিয়ানমারে থাকা স্বজনদের খোঁজ খবর নেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে যেখানে সকাল থেকে গোলাগুলি হচ্ছে, সেটি আমার গ্রাম ছিল। সেখানে এখনো আমার ছেলেসহ অনেক আত্মীয়স্বজন রয়েছে। তাদের খোঁজ নিতে এখানে (নাফ নদীর) জাদী বৌদ্ধ মন্দিরের পাহাড়ের ওপরে এসেছি। এখন থেকে ওপারে দৃশ্য দেখা যায়। আমরা খুব উদ্বিগ্ন।’
জাদিমুড়া সীমান্তের দায়িত্বরত নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বিজিবির এক সদস্য বলেন, ‘ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে ব্যাপক গোলাগুলি শব্দ পাওয়া গেছে। থেমে থেমে ৪-৫ বার গুলি বর্ষণের শব্দ হয়। বিশেষ করে লাল দিয়া নামক এলাকায় তুমুল গুলি বর্ষণ হয়েছে।’
তুমব্রু সীমান্তের বসবাসকারী মুহাম্মদ শাহাজান বলেন, ‘একদিনে আমাদের এলাকায় তিনটি মর্টার শেল এসে পড়েছে। এতে এখানকার লোকজন খুব আতঙ্কের মধ্য রয়েছে। সীমান্তে লোকজন খুব বিপদের মুখে আছে, কখন মিয়ানমারের ছোঁড়া মর্টার শেল ও গুলি এসে পড়ে!’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আজকেও ওপারের গোলাগুলির শব্দ এপারে নাফ নদীর সীমান্তে বসবাসকারী লোকজন শুনেছেন। আমরা এখানকার মানুষদের সর্তক থাকতে বলেছি। পাশাপাশি নতুন করে যাতে কোনো অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে সেজন্য আমাদের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী সর্তক অবস্থানে রয়েছে।’