সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরণ কামড় দিচ্ছে: মির্জা ফখরুল

0
91
রাজধানীর শ্যামলী ক্লাব মাঠে আয়োজিত জনসমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরণ কামড় দিচ্ছে। সারাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দিচ্ছে, বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। দেশের সবকিছু লুটেপুটে নিয়ে যাচ্ছে।

শুক্রবার রাজধানীর শ্যামলী ক্লাব মাঠে আয়োজিত এক জনসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, পুলিশি হয়রানি, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং, সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে এ জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপির পূর্ব ঘোষিত এ কর্মসূচি উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। বেলা আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। নেতাকর্মীদের হাতে ছিল ‘আমার ভোট আমি দেব’, ‘আমার গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত চাই’, ‘বাঁচার জন্য দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে’, ‘গুম-খুন বন্ধ করতে হবে’, ‘গায়েবি মামলা বন্ধ করতে হবে’ ইত্যাদি লেখা পোষ্টার ও প্ল্যাকার্ড।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশে-বিদেশে সর্বত্র বিশ্বস্ততা হারিয়েছে, সমর্থন হারিয়েছে। তাই আপনারা অবৈধ সরকারের নির্দেশ মানতে গিয়ে এমন কাজ করবেন না, যাতে চিহ্নিত হয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনাকে ফিরিয়ে এনে দেশকে মুক্ত ও মানুষকে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আসুন সেই শপথ নিয়ে, দেশের সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি ঝড়ের বেগে আন্দোলন গড়ে তুলি। ফয়সালা হবে রাজপথে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ আজ ভালো নেই। নিত্যপণ্যের মূল্য লাগামহীন। মানুষ রাস্তাতে ভালো নেই, বাসা-বাড়িতেও ভালো নেই। সেখানে বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই। রান্না করতে পারে না। ঢাকাতে পানিও নেই। কিন্তু সবকিছুর দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গ্রামের কৃষকরা ফসলের খেতে পানি দিতে পারে না। সারের দাম তিনগুণ-চারগুণ বাড়িয়েছে। তাও দিতে পারে না। আবার কষ্ট করে ফসল করলেও কৃষকরা ধান-পাটের দাম পায় না। বাজারে গেলে বোঝা যায় জিনিসের কী দাম। এই সরকার ১০ টাকা কেজিতে চাল খাওয়াবে বলেছিল। সেই চালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তেল, লবণ, চিনি, ডিম, পেঁয়াজ, আদা-রসুনের দাম বেড়ে গেছে। এমন কোনো জিনিস নেই, যার দাম বাড়েনি।

তিনি আরও বলেন, দেশের এ অবস্থার মধ্যেও ক্ষমতাসীন এমপি-মন্ত্রীরা এসি গাড়িতে-বাড়িতে বসে বলছেন, দেশের সব ঠিক আছে। তাদের বলব- এসি রুম থেকে বেরিয়ে মানুষের কাছে আসুন। তাদের মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন, চোখের ভাষা বুঝুন। আসলে যারা মানুষের মতকে তোয়াক্কা করেন না তারা এসবে বিশ্বাস করে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের সময় শেষ। তারা যতই চিল্লাচিল্লি করুক, বিদেশে সফর করুক। তাদের সময় শেষ। তাই এখনও সময় আছে জনগণকে মুক্তি দেন, জনগণের দাবি মেনে নেন। সাধারণ মানুষের ভাতের নিশ্চয়তা চাই। তাদের বাঁচার অধিকার চাই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। দেশের মানুষ এটা ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না এবং যেতে দেবে না। সংঘাত চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পালা বদলে বিশ্বাস করি। ২০১৮ সালে ডেকে নিয়ে বলা হলো- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, কোনো হয়রানি করা হবে না। কিন্তু অসংখ্য গায়েবি মামলা করা হলো। নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করা হলো। আবার দিনের ভোট রাতে করা হলো। তারা কোনো কথাই রাখেনি। তাই শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় জনসমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, কামরুজ্জামান রতন, যুবদলের মামুন হাসান, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.