এক আর্জেন্টাইনের ৪ গোলে উড়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদ

0
180
রিয়ালের বিপক্ষে একাই ৪ গোল করে নতুন কীর্তি গড়েছেন জিরোনায় ধারে খেলতে আসা আর্জেন্টাইান ফরোয়ার্ড তাতি কাস্তেয়ানোস

খেলা দেখার পরও বিশ্বাস না হলে চিমটি কেটে দেখতে পারেন। খেলা দেখে না থাকলে এখনই হাইলাইটস দেখে নিতে পারেন। তবু বিশ্বাস করতেই হবে।

রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে একাই ৪ গোল করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! এমন দৃশ্য মনে করলেই এত দিন এই প্রজন্মের ফুটবলপ্রেমীদের চোখে ভাসত রবার্ট লেভানডফস্কির মুখ। তবে আজ থেকে মনে রাখতে বাধ্য হবেন আরেকটি নাম—ভালেন্তিন মারিয়ানো হোসে কাস্তেয়ানোস হিমেনেজ, সতীর্থদের কাছে যিনি তাতি নামে পরিচিত। ২৪ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের একার ৪ গোলে জিরোনার কাছে ৪–২ ব্যবধানে উড়ে গেল রিয়াল।

রিয়ালের এ হারে লা লিগার শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বার্সেলোনা। ৩১ ম্যাচ শেষে কার্লো আনচেলত্তির দল ৬৫ পয়েন্টেই আটকে রইল। এক ম্যাচ কম খেলে ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বার্সা। এ মৌসুমেই দ্বিতীয় বিভাগ থেকে লা লিগায় উত্তরণ হওয়া জিরোনা উঠে এল নয়ে। বার্সার প্রতিবেশী এই কাতালান ক্লাবটির পয়েন্ট ৪১।

ঘরের মাঠ এস্তাদি মন্তিলিভিতে আজ নতুন এক কীর্তিই গড়ে ফেললেন তাতি কাস্তেয়ানোস। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে দশম ফুটবলার হিসেবে রিয়ালের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৪ গোল করলেন তিনি।

তবে একবিংশ শতাব্দীতে লা লিগায় এমন ঘটনা এটাই প্রথম। সর্বশেষ ১৯৪৭ সালে এই কীর্তি গড়েছিলেন ওভিয়েদোর স্ট্রাইকার এস্তেবান এচেভেরিয়া। শতবর্ষী এচেভেরিয়া এখনো জীবিত! ৭৬ বছর আগে তিনি রিয়ালের বিপক্ষে ৪টি নয়, আসলে ৫টি গোল করেছিলেন।

আর্জেন্টাইনদের মধ্যে রিয়ালের বিপক্ষে এক ম্যাচেই ৪ গোলের কীর্তি গড়া দ্বিতীয় খেলোয়াড় কাস্তেয়ানোস। ২০০৬ সালে কোপা দেল রের সেমিফাইনালে একাই চার–চারবার রিয়ালের জালে বল পাঠিয়েছিলেন জারাগোজার দিয়েগো মিলিতো।

তবে এই তাতি কাস্তেয়ানোস কিন্তু জিরোনার নিজস্ব খেলোয়াড় নন! মৌসুম শুরুর আগমুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব নিউইয়র্ক সিটি এফসি তাঁকে ধারে পাঠায় জিরোনাতে। গত বছর ২৫ জুলাই কাতালান ক্লাবটিতে যোগ দেন কাস্তেয়ানোস। রিয়ালকে তেতো অভিজ্ঞতার স্বাদ দিলেন ঠিক ৯ মাস পর—২৫ এপ্রিল! লস ব্লাঙ্কোদের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৪ গোলের সর্বশেষ রেকর্ডটাও হয়েছিল এপ্রিলেই; ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগে রোনালদো–রামোস–ওজিলদের স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন সে সময়ে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে খেলা লেভানডফস্কি।

তাতি কাস্তেয়ানোসের গোল উদ্‌যাপন
তাতি কাস্তেয়ানোসের গোল উদ্‌যাপন ছবি : রয়টার্স

এক দশক আগে–পরের কীর্তি দুটির মধ্যেও কী মিল! সেদিন রিয়ালের হয়ে মাঠে নামেননি দলটির প্রধান গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস, আজও তাই! বদহজমজনিত অস্বস্তির কারণে প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার জায়গায় খেলেন আন্দ্রি লুনিন।

চোটের কারণে আজ ছিলেন না রিয়াল অধিনায়ক করিম বেনজেমা ও ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবাও। তাতে অবশ্য কী আসে–যায়? যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও তো কম নন। বেনজেমা–আলাবাদের অনুপস্থিতিতে দুজনের অভাব ভুলিয়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল রদ্রিগো–নাচোদের সামনে। কিন্তু সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলেন কই?

ম্যাচের এক পর্যায়ে ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে ঝগড়া লেগে গিয়েছিল কাস্তেয়ানোসের
ম্যাচের এক পর্যায়ে ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে ঝগড়া লেগে গিয়েছিল কাস্তেয়ানোসের ছবি : টুইটার

এক কাস্তেয়ানোসের কাছে ধরাশায়ী হওয়াতেই বোঝা যায়, কতটা নড়বড়ে ছিল রিয়ালের রক্ষণভাগ। ২৪ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড ৪ গোলের দুটি করেন প্রথমার্ধে, দুটি বিরতির পর। মাদ্রিদে জন্ম নেওয়া জিরোনা কোচ মিশেল ৭২ মিনিটে কাস্তেয়ানোসকে তুলে না নিলে হয়তো এচেভেরিয়াকে ছুঁয়ে ফেলতেন।

কাস্তেয়ানোস যেখানে দুই অর্ধে দুটি করে গোল করেছেন, রিয়াল সেখানে একটি করে। প্রথমটি ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, অন্যটি বদলি নামা লুকাস ভাজকেজ। তবে সেটা শুধু হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। কেউ ‘অতিমানবীয়’ হয়ে উঠলে কী–বা করার থাকতে পারে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.