একের বেশি গাড়িতে দ্বিগুণ কর, দামি গাড়ি আরও দামি হচ্ছে

0
155
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন, ছবি: পিআইডি

কোনো করদাতার নামে একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে পরিবেশ সারচার্জ বাবদ কর দিতে হবে। তাতে একটি গাড়িতে যে পরিমাণ কর হতে পারে, দ্বিতীয় গাড়ির জন্য তার দ্বিগুণ কর দিতে হবে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নতুন বাজেট উপস্থাপনকালে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব দেন।

জানা গেছে, একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে ১৫০০ সিসি বা ৭৫ কিলোওয়াটের একটি ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য নিয়মিত করের (২৫ হাজার টাকা) পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও ২৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির ১৫০০ সিসির মধ্যে দুটি গাড়ি থাকলে, প্রথম গাড়ির জন্য ২৫ হাজার টাকা আর দ্বিতীয় গাড়ির জন্য ২৫ হাজার টাকার নিয়মিত করের পাশাপাশি পরিবেশ সারচার্জ বাবদ আরও ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে। ফলে দ্বিতীয় গাড়ির ৫০ হাজার আর প্রথম গাড়ির ২৫ হাজার মিলে এক বছরে মোট কর হবে ৭৫ হাজার টাকা।

এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহৃত কার ও এসইউভির মতো গাড়িকে বোঝানো হয়েছে। এ ছাড়া অন্য যেসব যানবাহন আছে, যেমন বাস, মিনিবাস, কোস্টার, প্রাইম মুভার, ট্রাক, লরি, ট্যাংকলরি, পিকআপ ভ্যান, হিউম্যান হলার, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল—এ–জাতীয় যানবাহনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সারচার্জের এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।

তবে অতিরিক্ত সিসির গাড়ি হলে পরিবেশ সারচার্জ বাবদ করভারেও পরিবর্তন আসবে। সে ক্ষেত্রে ২০০০ সিসি বা ১০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা, ২৫০০ সিসি বা ১২৫ কিলোওয়াট পর্যন্ত ৭৫ হাজার টাকা, ৩০০০ সিসি বা ১৫০ কিলোওয়াট পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩৫০০ সিসি বা ১৭৫ কিলোওয়াট পর্যন্ত ২ লাখ টাকা ও ৩৫০০ সিসি বা ১৭৫ কিলোওয়াটের বেশি যেকোনো গাড়িতে সাড়ে ৩ লাখ টাকা সারচার্জ দিতে হবে।
পরিবেশ সারচার্জ ফিটনেস নবায়নকারী কর্তৃপক্ষ উৎসে সংগ্রহ করবে।

দামি গাড়ি আরও দামি হচ্ছে

নতুন অর্থবছরের বাজেটে কর প্রস্তাবের ফলে দামি গাড়ি আমদানির ওপর কর আরও বাড়বে। ২০০১ সিসি থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। অন্যদিকে ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে বর্তমানে ৩৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আছে, যা বেড়ে হচ্ছে ৫০০ শতাংশ।

এ ছাড়া বিযুক্ত (সিকেডি) বা খোলা গাড়ি, যেগুলোর যন্ত্রাংশ আলাদাভাবে আমদানি করা হয়, সেসব গাড়িতেও সম্পূরক শুল্ক বাড়ছে। এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে মোটরগাড়ি, মোটরযান, স্টেশন ওয়াগন ও জিপ গাড়ি। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এসব গাড়ির ২০০১ সিসি থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির সম্পূরক শুল্ক ১০০ শতাংশ থেকে ২০০ শতাংশ করা হচ্ছে। ৩০০১ সিসি থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক ৩০০ শতাংশের পরিবর্তে ৩৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ধরনের বিযুক্ত ৪০০০-এর অধিক সিসির গাড়ি আমদানির জন্য আগে ৩৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিতে হতো। এখন সেটা ৫০০ শতাংশ করার জন্য নতুন বাজেটে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সম্পূরক শুল্কের কারণে গাড়ির দাম বাড়ে। কারণ, গাড়ির ব্লু-বুক বা শুল্কায়নযোগ্য দামের ওপর প্রথম সম্পূরক শুল্ক বসে। তারপর আমদানি শুল্ক, ভ্যাট, অগ্রিম করসহ অন্যান্য কর বসে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এমনিতেই স্থানীয় বাজারে গাড়ির দাম বেড়েছে। নতুন বাজেট অনুযায়ী করারোপ হলে দাম আরও বাড়বে।

এসইউভি ধরনের গাড়ি সাধারণত ২০০০ সিসির বেশি ইঞ্জিন ক্ষমতাবিশিষ্ট হয়। এখন জনপ্রিয় হচ্ছে এ ধরনের গাড়ির ব্যবহার। দেশে বিপুলসংখ্যক এসইউভি আসছে। টয়োটা, মিতসুবিশি, নিশান, টাটাসহ নানা কোম্পানির তৈরি এসইউভি গাড়ির ব্যবহার দেশে বাড়ছে।

গাড়ী

তিন বছরে এসইউভির বাজার দ্বিগুণ

গত তিন বছরে দেশে এসইউভির বাজার দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, তারা ২০২২ সালে সব মিলিয়ে ১০ হাজার ২৪৯টি এসইউভির নিবন্ধন দিয়েছে। ২০২০ সালে নিবন্ধন নিয়ে রাস্তায় নেমেছে ৪ হাজার ৯১১টি এসইউভি। এখন সম্পূরক শুল্ক বাড়লে এ ধরনের গাড়ির দাম আরও বাড়বে।

এদিকে প্রাইভেট কার বা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার তিন বছরে প্রায় ৩৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০২২ সালে সব মিলিয়ে ১৬ হাজার ৬৯৫টি ব্যক্তিগত গাড়িকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। তিন বছর আগে এ সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৪০৩। ব্যক্তিগত গাড়ি বা এসইউভি—দুই ক্ষেত্রে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ গাড়ির নিবন্ধন রাজধানীর ঢাকায় দেওয়া। অর্থাৎ রাজধানী ও এর আশপাশের অঞ্চলেই এসইউভি ও ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.