উড়োজাহাজে যাত্রীর চাপ বেশি নয়, চড়া টিকিটের দাম

0
201
উড়োজাহাজ

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পরিবার নিয়ে থাইল্যান্ডে বেড়াতে যেতে চেয়েছিলেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রাফিউজ্জামান। তবে উড়োজাহাজের টিকিটের দাম শুনে তিনি ভ্রমণ পরিকল্পনা স্থগিত করেছেন। তিনি বলেন, একজনের আসা-যাওয়ার টিকিটের দাম এখন ৫০ হাজার টাকার বেশি।

মধ্যপ্রাচ্যে নিয়মিত কর্মী পাঠান জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রাজধানী ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী টিপু সুলতান। তিনি দাবি করেন, ভারতের কলকাতা থেকে মধ্যপ্রাচ্য যেতে টিকিটের যে দাম, তার চেয়ে অনেক বেশি দর ঢাকা থেকে একই গন্তব্যে যেতে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ও জীবনযাত্রার বাড়তি ব্যয়ের কারণে এখন বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার টিকিটের চাহিদা কম। কিন্তু উড়োজাহাজের টিকিটের দাম কমছে না। বিদেশে কর্মী পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি, ভ্রমণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ট্রাভেল এজেন্সি ও টিকিট কাটার সঙ্গে যুক্ত এজেন্সির কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যাত্রার ক্ষেত্রে টিকিটের দাম বেশি। এ কারণে কেউ কেউ খরচ কমাতে কলকাতা থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যের টিকিট নিচ্ছেন (ভারতের ভিসা থাকা সাপেক্ষে)।

অনলাইনে উড়োজাহাজের টিকিট কাটার জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এক্সপেডিয়ায় গত রোববার ঢুকে দেখা যায়, ১৬ থেকে ২০ এপ্রিল সময়ে কলকাতা থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই যাওয়ার উড়োজাহাজের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ ডলারে। ঢাকা থেকে একই গন্তব্যের টিকিটের দাম ৩৫০ থেকে ৪৫২ ডলার পড়ছে। যদিও আকাশপথে ঢাকা ও কলকাতা থেকে দুবাইয়ের দূরত্বের পার্থক্য খুব বেশি নয়।

ভারতে ফ্লাইটের সংখ্যা বেশি হওয়ায় টিকিটের দাম কম। বাংলাদেশে যাত্রীর চেয়ে ফ্লাইট কম।

মো. মাহবুব আলী, বেসামরিক বিমান চলাচল প্রতিমন্ত্রী

এক্সপেডিয়ায় আরও দেখা যায়, একই এয়ারলাইনস দুবাই যেতে কলকাতার চেয়ে অনেক বাড়তি দাম হাঁকাচ্ছে ঢাকার ক্ষেত্রে। ওয়েবসাইটটিতে গত রোববার প্রবেশ করে ২৩ এপ্রিলের টিকিট খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, এমিরেটস এয়ারলাইনসের ঢাকা থেকে দুবাইয়ের টিকিটের দাম ৪৯১ ডলার। আর কলকাতা থেকে একই গন্তব্যের টিকিটের দাম ২৩৯ ডলার।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশের উড়োজাহাজের টিকিটের দাম বেশি হওয়ার দুটি কারণ বলছেন; ১. টিকিট বিক্রেতাদের (এজেন্ট) একটি চক্র টিকিট আগেভাগে বুকিং দিয়ে রাখে। ফলে কৃত্রিম চাপ তৈরি হয়। এতে দাম বেড়ে যায়। ২. বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট সংখ্যা যেহেতু কম, সেহেতু প্রতিযোগিতা কম। এতে বেশি দাম নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ভারতে ফ্লাইটের সংখ্যা বেশি হওয়ায় টিকিটের দাম কম। বাংলাদেশে যাত্রীর চেয়ে ফ্লাইট কম। তিনি বলেন, টিকিটের মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত চেষ্টা করা হচ্ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এটি নজরদারি করছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট আরও বাড়বে।

উড়োজাহাজের টিকিটের দাম বেশি হওয়ায় ব্যয় অনেক বেশি পড়ছে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া শ্রমিকদের। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, বিগত তিন মাসে বিদেশে গেছেন প্রায় ৩ লাখ ২৩ হাজার বাংলাদেশি কর্মী। প্রবাসীরা বলছেন, বছর চারেক আগেও বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব যেতে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকায় উড়োজাহাজের টিকিট পাওয়া যেত। এরপর থেকে দাম বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বরে টিকিটের দাম ৬০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। এখন একই গন্তব্যে টিকিটের দাম পড়ছে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। এ সময়ে জ্বালানির দামও বেড়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, টিকিটের চড়া দামের বিষয়টি নিয়ে ঈদের পর আলোচনা করা হবে বলে সরকারের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে।

টিকিট আগাম বুকিং দিয়ে রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযোগ জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সিজ অব বাংলাদেশ (আটাব)। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, বাংলাদেশ বিমানের টিকিট সহজলভ্য হলে ও কম দামে পাওয়া গেলে অন্যরা দর কমাতে বাধ্য হবে। আটাবের সাধারণ সম্পাদক মাযহারুল এইচ ভূইয়া বলেন, যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, তাঁরা ভ্রমণের সময় উড়োজাহাজের আসন খালি দেখতে পান। তবে টিকিট কিনতে হয় চড়া দামে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.