উপাচার্যের পদত্যাগ ঠেকাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

0
59
পদত্যাগ না করার দাবি নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরে শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার বিকেলে, ছবি: সংগৃহীত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে পদত্যাগ করা থেকে বিরত রাখতে বিক্ষোভ করেছেন। ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন পদত্যাগ করছেন’, এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে আজ রোববার বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে সমবেত হয়ে এ বিক্ষোভ করেন। এ সময় প্রশাসনিক ভবনসংলগ্ন এলাকায় তাঁরা নানা স্লোগান দেন।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যদের পদত্যাগের দাবি তুলছেন শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগরসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ব্যতিক্রম হওয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে উপাচার্য মাহমুদ হোসেনের ভূমিকা ছিল শিক্ষার্থীদের পক্ষে। তিনি আন্দোলন চলাকালে ক্যাম্পাসে কোনো পুলিশ ঢুকতে দেননি। ‘আমার ক্যাম্পাসে কোনো পুলিশ প্রশাসন ঢুকতে পারবে না; এখানে আমিই প্রশাসন’—আন্দোলনের সময় উপাচার্যের এমন একটি বক্তব্যের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের এক পর্যায়ে উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করে বলতে থাকেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন উপাচার্য আজ পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর পদত্যাগ চান না। তিনি পদত্যাগ করলে শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না। দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনে অবস্থান করে পদত্যাগ না করার জন্য স্লোগান দিতে থাকলে এক পর্যায়ে উপাচার্য প্রশাসন ভবনের নিচে নেমে প্রবেশদ্বারে জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থিত হন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন, ছবি: সংগৃহীত

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমন্বয়ক ও পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) শিক্ষার্থী জহুরুল তানভীর বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, উপাচার্য স্যারের পদত্যাগ কোনো অবস্থাতেই মেনে নেব না। উপাচার্য স্যার বিশ্ববিদ্যালয়কে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য যেভাবে কাজ করছেন, সেভাবে কাজ চালিয়ে যাবেন, তাতে যদি কোনো বাধা আসে, আমরা তা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব।’ তিনি বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে যদি অভ্যন্তরীণ বা বাইরের কোনো চাপ থাকে, তা–ও শিক্ষার্থীরা প্রতিহত করবেন। উপাচার্য যাতে পদত্যাগে বাধ্য না হন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘তোমরা যারা যে দাবি নিয়ে এসেছ, এটা আমার শিক্ষকতা জীবনের একটি বড় পাওয়া। আমার জীবনের অনেক প্রাপ্তির মধ্যে এটা একটা বড় প্রাপ্তি। আমাকে আরেকটু ভাবার সময় দাও।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘দেখো, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শুধু একা নন, এখানে একটি টিম (দল) কাজ করে। কেউ একটু বেশি করেন, কেউ হয়তো একটু কম। সবাই তো এক ধরনের নয়, ভালো-মন্দ থাকে। তোমরা যে বিষয় নিয়ে আসছ, তা আমি ভেবে দেখব এবং এ বিষয়ে আমি আমার টিমের সঙ্গে কথা বলে তারপর তোমাদের সিদ্ধান্ত দেব। যতক্ষণ না বসছি, ততক্ষণ আছি আরকি।’

পরে উপাচার্য তাঁর দপ্তরে ফিরে যান এবং সেখানে উপস্থিত সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুসসহ শিক্ষকদের সঙ্গে বসেন। তখনো শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কক্ষের বাইরে অবস্থান করছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.